বগুড়া প্রতিনিধি:বগুড়ায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি(ইজিপিপি) প্রকল্পের শুধু কাজ কাগজে-কলমে। প্রকল্পে বরাদ্দ সরকারের নির্দেশনা থাকলেও কর্ম এলাকায় টাঙানো হয়নি প্রকল্প বিবরণীর সাইনবোর্ড । বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতাধীন ২০২০-২১ অর্থ বছরের কাগজ-কলমে প্রকল্প বরাদ্দ ঠিক থাকলেও অর্থ নয়ছয়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির (৪০দিন) আওতায় ৫০টি প্রকল্পের নাম চূড়ান্ত করা হয়। প্রতিটি প্রকল্পের কাজ কাঁচা রাস্তা সংস্কার। এই প্রকল্প গুলো বাস্তবায়নের জন্য ১হাজার ৪৬১ জন শ্রমিকের অনুকূলে ১কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ১৪ নভেম্বর শুরু করা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ৯ জানুয়ারী। প্রত্যেক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ২০০ টাকা। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শুক্রবার কাজ বন্ধ। বাকি পাঁচ দিন কাজ করার কথা। শ্রমিকদের প্রত্যেকের নামে ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় পৃথক হিসাব খোলা হয়েছে।
সরকারি উন্নয়ন কর্মকাÐের প্রচার, তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করতে ও কাজের স্বচ্ছতার জন্য প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙানোর জন্য সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি প্রকল্প এলাকায় কাজ শুরুর আগেই সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ওই প্রকল্পের আয়তন, বরাদ্দের পরিমাণ, কাজের বিবরণ, শ্রমিকের মজুরির হারসহ ১০টি বিষয়ে তথ্য বিস্তারিতভাবে থাকার কথা।
সাইনবোর্ডে প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যানের নাম-ঠিকানা, জেলা প্রশাসনের ফোন নম্বর ও প্রকল্প পরিচালকের ফোন নম্বর থাকার নিয়ম রয়েছে। যাতে জনগণ কোনো অভিযোগ সহজে কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন। এ ছাড়া কোনো প্রকল্পে সঠিক সাইনবোর্ড প্রদর্শনে ব্যর্থতার কারণে ওই প্রকল্প বাতিল করে দেওয়ার কথাও নীতিমালায় রয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি প্রকল্প এলাকা ঘুরে কোনোটিতে সাইনবোর্ডের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ ইজিপিপি কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার দাঁড়াকাটা পাকা রাস্তা হয়ে কান্দুনিয়ার দিকের রাস্তা ও তবিবরের বাড়ি হতে হরিষ ঘোষের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজের বরাদ্দ ২ লাখ ১০হাজার টাকা। সেখানে ২৬জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেছে। অথচ কাজের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তারাকান্দি বদির বাড়ি হতে তাজুর বাড়ি পর্যন্ত ও হরিণগাড়ী ব্রীজ হতে বেকির হালোট পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার কাজের বরাদ্দ ২লাখ ২৬ হাজার টাকা। সেখানে ২৮জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করলেও রাস্তায় এক চিমটি মাটি পড়েনি। শৈলমারি হবি মেম্বারের বাড়ি আড়িয়ামারা হয়ে চালারভিটা পর্যন্ত ও এলাঙ্গী হানিফের পুকুর হতে শৈলমারি সাহেব আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত কাজের বরাদ্দ ২লাখ ২ হাজার টাকা। সেখানে ২৫জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেছে। কিন্ত রাস্তায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিছু কিছু প্রকল্পে সামান্য পরিমান কাজ করা হয়েছে। কিন্ত সিংহভাগ প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নিজেদের পছন্দের লোককে শ্রমিক দেখিয়ে তাদের নামে ব্যাংক হিসাব খুলেছেন। পরে তারা কৌশলে এসব শ্রমিকের হিসাব নম্বর থেকে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এমএ তারেক হেলাল বলেন, অলসতা করে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়নি। আমি দ্রæত তা টাঙানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমার ইউনিয়নে ইজিপিপির ৫টি প্রকল্পের মধ্যে ২টি প্রকল্পের কাজ করেছি। অবশিষ্ট ৩টি প্রকল্পের কাজ মাটির অভাবে করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই ৩টি প্রকল্পের টাকা তুলে অন্য প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ইজিপিপির বরাদ্দ পেলে ওই ৩টি প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল আলিম বলেন, সাইনবোর্ড বানানো রয়েছে। তবে ইউপি চেয়ারম্যানরা প্রকল্পের সাইনবোর্ড নিয়ে গিয়ে লাগাতে চান না। তবে অচিরেই যাতে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রকল্পের কাজের ২০ দিনের মজুরি ছাড় করা হয়েছে। বাকি টাকা প্রকল্পের কাজ তদারকি করে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, কোনো প্রকল্পের কাজেই অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করব। কাজের গরমিল পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।