ফরিদপুর :: দুজনেই সরকারি কর্মকর্তা। তারা দুজনেই মানবিক চেতনার মানুষ। দেশের দুঃসময়ে তারা দুজনেই মানুষের জন্য একইবৃন্তের দুটি পরিস্ফুটিত ফুল। যারা নিজেদের ও পরিবারের সকলকে ঝুঁকিতে রেখে অন্য সবার জন্য হাত বাড়িয়েছেন মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর মাঝে। এক কথায় তারা দুজনেই সম্মুখ সমরে থাকা দুই সাহসী করোনা যোদ্ধা। তারা হলেন, ফরিদপুরের জনবান্ধব জেলা প্রশাসক অতুল সরকার অপরজন ফরিদপুরের জনবান্ধব পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান।
গত ৮মার্চ দেশে করোনার শুরু হওয়ার দিন থেকেই তারা দুজন ফরিদপুরকে ভালোর রাখার জন্য নানামুখি ভূমিকা পালন শুরু করেন এ জেলায়। যেখানে প্রচুর বিদেশ ফেরত ও ঢাকা-নারায়নগঞ্জ আসা গামীদের সঠিকভাবে হোমকোয়ারন্টোইন সহ নানা নিয়মে পালনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা রয়েছে ব্যাপক। একই সাথে তারা জেলা জুড়ে মানবিক খাদ্য সহায়তা হিসেবে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন হত দরিদ্রদের বাড়িতে বাড়িতে। এছাড়াও তারা রাতের আধারে নিম্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বাড়িতে গোপনে দিয়ে চলছেন খাদ্য সামগ্রী। সব মিলিয়ে ফরিদপুরে এমন দুজন করোনা যোদ্ধার ভূমিকায় জেলাবাসি অভিভূত ও আপ্লুত।
ফরিদপুরের জনবান্ধব জেলা প্রশাসক অতুল সরকার করোনা সময়ে অব্যাহত রেখেছেন নানা মুখি তৎপরতা। তার তৎপরতায় করোনার প্রভাব জেলায় যেভাবে হওয়ার কথা ছিলো তা হতে পারেনি। সংখ্যার হিসেবে জেলায় শত পার হলেও সে সংখ্যা জেলার বাইরে ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। স্থানীয় ভাবে আক্রান্তের ঘটনা তেমন ঘটেনি। নিজ জেলার বাসিন্দাদের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছেন দিনরাত তার জেলা টিম নিয়ে।
এরই ভিতর করোনা সংকট মোকাবেলায় কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান, অসহায় দুঃস্থ সহ নানা শ্রেনির পেশার মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মানবিক সহায়তা উপহার ও বিভিন্নস্থান থেকে প্রাপ্ত খাদ্য সামগ্রী বিতরণ সহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি। এছাড়া জেলা প্রশাসকের হটলাইনে ফোন দিলেই মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত অভুক্ত মানুষের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী।
করোনার শুরুতেই জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে বাজার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে যাতে করে বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় কমানো সম্ভব হয়। এবং মানুষ জনকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো যায়। বাজার গুলোকে খোলা মাঠে নিয়ে গেছেন সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে।
তার সুন্দর সুন্দর মহতি উদ্যোগ প্রশংসা পেয়েছে নিজ জেলা ছাড়াও দেশের সর্ব গন্ডিতে। তার ভাবনা চিন্তার ফসল মানবিক কার্ড এখন সারাদেশে রোল মডেল এ পরিনত হয়েছে। করোনা ভাইরাস বিপর্যয় কালিন সময়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের এই মডেল গ্রহন করে এরই মধ্যে অনেক জেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মানবিক উপহার বিতরণ শুরু করেছেন হত দরিদ্রদের মাঝে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের এক সময়োপযোগী সৃজনশীল সৃষ্টি এই ”মানবিক সহায়তা কার্ড”। এ কার্ডে উপকারভোগীর পরিবারের সকল তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। এছাড়া ছবিযুক্ত কার্ড থাকার কারনে অনেকেই চাইলেও এই কার্ডধারী ব্যক্তিকে বাদ দিতে পারবে না। আবার একই ব্যক্তি বিভিন্ন জায়গা থেকে একবারের বেশি মানবিক সহায়তা ভোগ করতে পারবে না। এই কার্ডের পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতিতে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য একটি ওয়েবসাইট ডিজাইন করা হয়েছে। ওয়েবসাইটটিতে প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ আপলোড করার পরে এটা জনসাধারনের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এতে কোন এলাকা থেকে কে মানবিক সহায়তা পাচ্ছে, সে মানবিক সহায়তা প্রাপ্তির উপযুক্ত কিনা এবং কেউ মানবিক সহায়তার আওতা থেকে বাদ পড়লো কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে যে কেউ জানতে পারবে। মানবিক সহায়তা প্রদানের এ স্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তাকে সকল প্রশ্নের উর্ধে রেখে জনসাধারনের মাঝে এক আস্থার সঞ্চারন করেছে বলে সকলের দৃঢ় বিশ্বাস করছে।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের এই মানবিক সহায়তা কার্ড প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর গ্রহন করে এই আলোকে দেশের অন্যসব জেলায় মানবিক সহায়তা কার্ড করার জন্য বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসকদের দপ্তরে চিঠি প্রেরন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ফরিদপুরের মডেল মানবিক সহায়তা কার্ডের মডেলটি অবিকল রেখে দেশের অন্যসব জেলা প্রশাসন কার্ড গ্রহন করে তারা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম কাজ শুরু করেছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক প্রতিটি শ্রেনি পেশার মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার কঠোর তদারকির কারনে এ পর্যন্ত জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে কোন ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। করোনার দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষকে সর্বাধিক সেবা প্রদান করে আলোচনায় জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এখন জেলা প্রশাসকের প্রশংসা।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান করোনা সময়ে প্রথম থেকেই অব্যাহত রেখেছেন আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ লকডাউন, নিশ্চিতে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও সচেতনতাসহ নানা উদ্যোগ। একইসঙ্গে চালাচ্ছেন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পথেঘাটে মাঠে নানা তদারকিসহ নানা স্থানে চেকপোষ্ট। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করছেন জেলা পুলিশের মাসিক দুদিনের বেতনের টাকা থেকে ত্রাণ সামগ্রী। জেলা পুলিশের দেয়া হটলাইনে ফোন দিলেই মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত অভুক্ত মানুষের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী। এতিম, প্রতিবন্ধী ভাসমান ও ছিন্নমূল অনাহারী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে ইফতার। রোজার শুরু থেকে শেষ রাতে শতাধিক ভাসমান মানুষের মাঝে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সেহরি নিয়ে হাজির হচ্ছেন নিয়ম করে।
করোনার ছোবল থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের রক্ষা করতে পুলিশ লাইনস ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বসানো হয়েছে জীবাণু নাশক টানেল। করোনা আক্রান্ত হয়ে একাধিক মৃত ব্যক্তি ও এ ধরনের রোগে আক্রান্ত মৃতদের লাশ দাফনে এলাকাবাসী ভয় পেলেও পুলিশ সদস্যরা এসব লাশের দাফন সম্পন্ন করছেন।
জেলা পুলিশের এই সুযোগ্য পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান বিপিএম এর নির্দেশে পুলিশ বাহিনী দিন থেকে রাত অবধি কাজ করে চলেছেন জেলায়। নিরবে ও নিভৃতে অসহায়দেরকে সাহায্য করে চলেছেন এই দায়িত্ববান পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে। রমজান মাসে তারা নিজেরা খাবার তৈরি করে পথেঘাটে অভুক্ত লোকের মাঝে দিচ্ছেন, তার পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর সাথে আসা অসহায় গরিব লোকদেরও খাবার দিচ্ছেন। করোনা সংকটে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগিদের রক্ত দিয়ে সাহায্য করছেন জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে তার পুলিশ সদস্যরা। তার সুন্দর সুন্দর বিভিন্ন মহতি জনমুখি কর্ম জেলার বাইরেও দেশের সর্ব গন্ডিতে ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছে। একই সাথে তার নির্দেশে জেলার ৯টি থানা থেকে সহায়তা করা হচ্ছে হতদরিদ্রদের খাদ্য সামগ্রী দিয়ে।
এসব কাজের সমন্বয় করছেন পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান নিজেই। তার এসব ভূমিকায় জেলাবাসি তাকে জনবান্ধব পুলিশ সুপার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। করোনার দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষকে সর্বাধিক সেবা প্রদান করে আলোচনায় এখন জেলা পুলিশ সুপার। তাই সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এখন জেলা পুলিশ সুপারের প্রশংসা।
উল্লেখ্য গত কদিন আগে তার হঠাৎ বদলির আদেশ আসলে ফরিদপুরের সব শ্রেনির মানুষ এর তীব্র বিরোধিতা করতে থাকেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে। অবশেষে তার বদলির আদেশ স্থগিত শুনে স্বস্তি পায় জেলাবাসি। এই আদেশ স্থগিত এর কারনে জেলাবাসি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে চলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
সামনের দিন গুলোতেই এই দুই করোনা যোদ্ধা ফরিদপুর বাসীকে এমন ভাবে নিরাপত্তার চাদরে আগলে রাখতে আরো জোরালো ভূমিকা পালন করবে তেমনটাই প্রত্যাশা করছেন ফরিদপুরসহ জেলার সকল থানার সাধারণ মানুষ।