দেশের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সূচক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছে ১৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের একই মাসে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিলো ১৪৫ কোটি ডলার। সেই হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ কোটি ডলার আয় বেড়েছে যা, দেশিয় মুদ্রায় ২ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। শতাংশের হারে প্রায় ২৩ শতাংশ। প্রবাসীদের আয়ে ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪১২ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার শুরুতে বিশে^র অন্যদেশের রেমিটেন্স আয়ের প্রবাহ কমে গেলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উল্টো চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশে করোনায় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ অনেক বেড়েছে। প্রবাসী আয় বাড়ার পেছনে তারা কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, করোনাকালে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে মানুষের আসা কমে যাওয়ায় অবৈধ পথে অর্থ আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে প্রবাসীদের রেমিটেন্সের উপর নগদ প্রণোদনার ফলে প্রবাসী আয় বেড়েছে।
তারা জানিয়েছেন, করোনার শুরুতে পণ্য রপ্তানি আয় কয়েক মাস কম থাকলেও তা এখন প্রায় স্বাভাবিক অবস্থা চলে এসেছে। যদিও আলোচিত সময়ে আমদানি ব্যয় বেশ কমেছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে।
জানা যায়, চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ডলারের আয় পাঠিয়েছিলেন যা, দেশিয় মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৬৪ কোটি ডলার। যা দেশিয় মুদ্রায় ১৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের জানুয়ারি মাসে রেমিটেন্স আয় বেড়েছে ২ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা সব মিলিয়ে ১ হাজার ৬৬৮ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় এসেছিল ১ হাজার ২৪৯ কোটি ডলার।
সম্প্রতি দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, প্রবাসী আয়ে বিশে^র প্রথম সারির ১০ উন্নয়নশীল দেশের ৭টিরই আয় গত বছর কমেছে। এর মধ্যে তিনটি দেশের আয় বেড়েছে। এই তিন দেশের মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ। অন্য দুটি দেশ হলো মেক্সিকো ও পাকিস্তান।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ১ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৮৮ কোটি ডলারে। একইভাবে পাকিস্তানে ২০১৯ সালে ২ হাজার ২২০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪১০ কোটি ডলারে।
বাংলাদেশের প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ার পেছনের কিছু কারণের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। তাদের বর্ণনায়, বাংলাদেশের প্রবাসীদের অনেকে তাদের চাকরি হারিয়ে নিজেদের জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। এই প্রবণাতা উপসাগরীয় দেশগুলোর শ্রমিকদের মধ্যে বেশি ছিল। চাকরি হারোনার বিষয়ে বলা হয়েছে, তেল উৎপাদনকারি দেশগুলোর আয় কমেছে। কারণ করোনার প্রভাবে তেলের বিশ^ব্যাপী কমে যাওয়া এবং পর্যটন ব্যবসায় ধস নামায় ওই অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতি সংকটে পড়েছে। ফলে তারা কর্মী ছাটাইয়ের পথ বেঁছে নিয়েছে। তবে সংস্থাটি বলেছে, ২০২১ সালে সেটি আবার কমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কেননা, করোনা মহামারীর জেরে অনেক দেশের শিল্প-কারখানা ও নির্মাণ শিল্প সস্কুচিত হওয়ার কিতে রয়েছে। ফলে শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থান কমে আসতে পারে। তবে এটি যে ঘটবেই, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক শ্রম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বিশ্বের ১৬৯ দেশে অন্তত এক কোটি ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশী প্রবাসী রয়েছে। তবে এদের অধিকাংশই শ্রমিক। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশে কর্মরত রয়েছেন।
নানা কারণে যেসব প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছেন তাদেরকে সাবলম্বী করতে প্রবাসীদের কল্যাণে ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করা হয়েছে। বিদেশ ফেরতদের স্বকর্মসংস্থানের জন্য সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে। তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে কোন জামানত লাগবে না।