নেত্রকোণা প্রতিনিধিঃ দ্বীনি শিক্ষার ক্ষেত্রে এক পবিত্র স্থান এতিমখানা। যেখানে প্রতিনিয়ত কোরআন শিক্ষা দেয়া হয়। এই পবিত্র স্থান এতিম শিশুর নিরাপদ ঠিকানা। সেখানে শত শত দুঃস্থ, গরীব, প্রতিবন্ধী ও মা-বাবা বিহীন বঞ্চিত শিশুর বেড়ে উঠা। ‘‘এতিম শিশুকে নিজের সন্তান মনে করে লালন-পালন করছে’’ তা এতিমখানায় না গেলে বুঝা মুশকিল ।
এসব এতিমখানা থেকে আলেম, হাফেজ ধারাবাহিকভাবে নিয়মিত বের হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামের অগ্রনি ভুমিকা পালন করে আসছে। এতিমখানায় রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা যথাক্রমে ১) ভবনের সমস্যা, ২) পুকুরে পাকা ঘাট ৩) বাউনডারী ৪) মসজিদের অবকাঠামো ৫) আসবাবপত্র ৬) খেলার মাঠ ৭) নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে এতিমখানাগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। বলছি নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলার কয়েকটি এতিমখানার কথা।
এতিমদের থাকা-খাওয়া ও দ্বীনি শিক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে জেলার মদন উপজেলার আলমশ্রী এতিমখানাটি ২০০১সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন ও সুপার মাওলানা জুনায়েদ আহম্মদ। এতিমখানাটিতে প্রায় ৫০জন এতিম নিবাসী থেকে খেয়ে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করছে। এতিম নিবাসী মাহমুদুল হাসান বলেন, বাউন্ডারী প্রাচীর না থাকায় আমরা অরক্ষিত অবস্থায় থেকে খেয়ে দিনানিপাত করতে হয়। নিবাসী এমদাদুল্লাহ বলেন, এতিমখানার হুজুররা আমাদের বাবা-মায়ের মতো স্নেহ করেন। প্রতিষ্ঠানটি সমাজসেবা অধিদফতরের ক্যাপিটেশন গ্রান্টের আওতায় ২৫জন শিশু তালিকাভুক্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল রশিদ বলেন, এই এতিমখানা থেকে মাওলানা মোজাহিদ আহম্মদ, মাওলানা আব্দুল মনির, মাওলানা আশরাফুল ইসলাম সোহাগসহ অনেকেই বর্তমানে দেশের প্রখ্যাত ইসলামী বক্তা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
উপজেলার মডেল এতিমখানা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে হাজী ওহেদ আলী এতিমখানা। এই এতিমখানা থেকে প্রায় শতাধিক ইসলামী বক্তা দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলাম ধর্মের অগ্রণী ভূমিকা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন । দিনের পর দিন এতিম সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে বহুতল ভবনে শতাধিক এতিম নিবাসী নিয়ে চলছে এতিমখানার কার্য্যক্রম, যা এতিমখানার দৃষ্টান্ত হিসেবে উপজেলায় সুনাম অর্জন করেছে। এতিমখানাটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার ও সুপার মাওলানা সাখাওয়াৎ হোসেন। এতিমখানাটি সমাজসেবা অধিদফতরের ক্যাপিটেশন গ্রান্টের আওতায় ৭০জন এতিম নিবাসী তালিকাভুক্ত রয়েছে। থাকা, খাওয়া, জামা-কাপড়, ঔষধের অভাববোধ কখনোই হয়নি উল্লেখ করে এতিম নিবাসী আবু কাওসার বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য একটি সৌর বিদ্যুৎ আমাদের এতিমখানার জন্য অতিব প্রয়োজন। এতিম তোফায়েল বলেন, নামাজ পড়ার স্থানটিতে আমরা সকল এতিম ভাই একসাথে নামাজ পড়তে খুব সমস্যা হয়, তাই নামাজ পড়ার ঘরটি অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অনুরোধ জানান এই এতিম নিবাসী।
উপজেলার সদ্য প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা পাঁচ আলমশ্রী এতিমখানা। এতিমখানাটি ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করে রফিকুল ইসলাম স্বপন, সুপার রফিকুল ইসলাম। এতিমখানার প্রায় ৩০জন এতিমকে আরো সুন্দর পরিবেশে কোরআন শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। এতিমখানার নিজস্ব জায়গা থাকলেও অর্থের অভাবে নতুন ভবন নির্মাণ করতে পারছে না বলে জানান স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন। বর্তমানে এই এতিমখানার ১৪জন এতিম নিবাসী সমাজসেবা অধিদফতরের ক্যাপিটেশন গ্রান্টের আওতায় তালিকাভূক্ত আছে। এতিমনিবাসী রতন মিয়া জানান, খাওয়া-দাওয়া, কাপড়-চোপর, ঔষধের অভাব আমাদের কোনো এতিম ভাই অভাব বোধ করেনি কিন্তু দীর্ঘদিনের পুরাতন ভবনের জানালা নষ্ট থাকায় রাতে ঘুমাতে আমরা খুব ভয় পাই। এতিম নিবাসী মোহাম্মদ মোস্তাকিম জানান, খাবার-দাবারের সমস্যা নেই কিন্তু পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। হাফেজ মাওলানা আব্দুল হাই, মাওলানা কামাল উদ্দিন, হাফেজ মাওলানা মোস্তফা, মাওলানা জুনায়েদ আহাম্মেদসহ অনেকেই ইসলামী বক্তা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে এতিমখানার সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছেন।
তালুককানাই কামরুন্নেছা এতিমখানা মদন উপজেলার একটি অবহেলিত এতিমখানা। মূল সড়ক থেকে এতিমখানায় পৌছানোর রাস্তাটি কাঁচা হওয়ায় প্রায় একশত এতিমকে খুব কষ্টে চলাফেরা করতে হয়। এতিমদের দিকে তাকিয়ে হলেও এই রাস্তাটি পাকা করার ব্যবস্থা করে দিবেন জনপ্রতিনিধিরা এমনটিই প্রত্যাশা স্থানীয়দের। এতিমখানাটির সভাপতি রফিকুজ্জামান, সুপার আব্দুর রাশিদ। সমাজসেবা অফিসের ক্যাপিটেশন গ্রান্টের আওতায় ৩৩জন এতিম নিবাসী তালিকুভূক্ত আছে। এতিম নিবাসী তাইকুল ইসলাম বলেন, খাওয়া-দাওয়া, ঔষধ, কাপড়ের অভাব নেই, অভাব শুধু চলাফেরায়, জুতা পা দিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা খুব কঠিন। তাই রাস্তাটি মেরামতের দাবী জানান এই এতিম নিবাসী। এতিম আমির হামজা বলেন, পড়া-শোনা, কাপড়ের সমস্যা নেই কিন্তু অজু ও গোসল করার জন্য প্রয়োজন একটি পাকা ঘাটের।
নেত্রকোণা ও দেশের বিভিন্ন জেলার মুসলমানদের মধ্যে অনেক হৃদয়বান ধর্ম প্রিয় মানুষ রয়েছে যারা এসব সমস্যা একেকজন একটা করে সহযোগিতার হাত বাড়ালে সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে বলে মনে করেন এতিমখানার সাথে সংশ্লিষ্টরা ।