নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সূর্যসন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে কৃতজ্ঞ জাতি। নানা কর্মসূচিতে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানানো হয়েছে তাদের। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতাতেও মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধসহ অন্যান্য স্থানে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের কোনো কমতি ছিল না।
সোমবার ভোরের আলো ফোটার আগেই মিরপুর ও রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ঢল নামে মানুষের। তবে করোনায় এবার অন্য যেকোনো বারের চেয়ে ভিড় সামান্য কিছুটা কম ছিল। সকাল থেকেই সর্বস্তরের মানুষের অশেষ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অর্ঘ্যে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির মিনার। জাতীয় পতাকা, ফুল, প্লেকার্ড নিয়ে উপস্থিত হন তারা।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার-আলবদররা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যার নীলনকশা করে। ১৪ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে যায় শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ অনেক বুদ্ধিজীবীকে। রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তাদের। এ ছাড়া অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা করে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সোমবার দেশজুড়ে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয় তাদের অসামান্য আত্মদানকে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে ভিন্ন আবহে। সব কর্মসূচিতেই রয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার তাগিদ।
কর্মসূচির শুরুতে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৭টা ১০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী।
এসময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল সামরিক কায়দায় সালাম জানায়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতেও সর্বস্তরের জনসাধারণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রায়েরবাজার বধ্যভূমি উম্মুক্ত করে দেওয়া হলে শীতের কুয়াশা উপেক্ষা করেই জনগণের ঢল নামে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা চলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
প্রথমেই রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এরপর একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ, বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, শেখ হাসিনা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
জাতীয় দৈনিক, সংবাদ মাধ্যম, টেলিভিশন, রেডিওতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান, সংবাদ ও তথ্য প্রচার করছে দিনভর। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারাদেশেই চলছে এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি।