রাসেল হাওলাদার, বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনা জেলায় দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর (বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর) এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল ৩১ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার। বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর প্রাঙ্গণে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বরগুনা জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত এই জাদুঘরের শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ’র পরিকল্পনায় বাস্তবায়তি এই জাদুঘরের শুভ উদ্বোধন করবেন বরগুনা -১ আসনের সংসদ সদস্য জনাব ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, গণমাধ্যমসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, বরগুনার পর্যটন শিল্পকে দেশে ও দেশের বাহিরে তুলে ধরতে বঙ্গবন্ধু নৌকা যাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই যাদুঘরের মাধ্যমে নৌকার ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশকে জানবে, পাশাপাশি বরগুনা জেলাকেও চিনতে পারবে।
জানা যায়, বিগত ০৮ অক্টোবর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকার। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাত্র ৮১ তম দিনে জাদুঘরের নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। বরগুনার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোস্তাইন বিল্লাহ বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘরের নামকরণ, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ) উপলক্ষ্যে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন ৭৮ শতাংশ জায়গা জুড়ে জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩০ ফুট প্রস্থের নৌকার আদলে নির্মিত জাদুঘরটি দূর থেকেই দেখা যাবে একটি বড় নৌকা। এর মূল ভবন ৭৫ ফুট, প্রতিটি গলুইর দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট। এই স্বয়ংসম্পূর্ণ জাদুঘরে থাকছে দেশ-বিদেশের নানান আকৃতির একশত প্রকারের নৌকার অনুকৃতি/ মিনিচা’র, একটি নৌকা গবেষণা কেন্দ্র, আধুনিক লাইব্রেরি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, শিশুদের বিনােদনের জন্য বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা, ৯ ডি থিয়েটার, ফুড ক্যাফে ইত্যাদি। আগামী ১০ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ হতে সকল দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘর খুলে দেয়া হবে।
প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ নদীমাতৃক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে নৌকা ব্যবহৃত হচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযানে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ নৌকা ব্যবহার করতেন। নৌকা ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বহন করে। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ উপকূল ঘেঁষে প্রবাহিত পায়রা, বলেশ্বর, বিশখালী ও খাকদোন বিধৌত জেলা বরগুনা। এই জেলার নামকরণের যে একাধিক জনশ্রুতি রয়েছে তার প্রায় সবগুলোই নৌকার সাথে সম্পৃক্ত। জেলায় রয়েছে প্রায় ৬০,০০০ মৎস্যজীবী-নৌকা যাদের জীবনের সাথে অপরিহার্যভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের নৌকা রয়েছে। কালের পরিক্রমায় এসব নৌকা হারিয়ে যাচ্ছে।
এই হারিয়ে যাওয়া নৌকার স্মৃতি ধরে রাখতে মুজিব শতবর্ষে জেলা প্রশাসন বরগুনা দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জাদুঘরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ধরণ ও আকৃতির নৌকাসমূহের অনুকৃতি/ মিনিচা’র সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও নৌকা জাদুঘরের মাধ্যমে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা -২১০০ বাস্তবায়নসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ধারণ, জেলার পর্যটন শিল্পের বিকাশ, বাংলাদেশের চিরায়ত লোকজ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও তরুণ প্রজন্মের নিকট নৌকার অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু নৌকা যাদুঘর নির্মাণ কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জালাল উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশ্রাফুল ইসলাম সহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এবং বরগুনার অনেক সাংবাদিকবৃন্দ।