দেশেই তৈরি হলো ধান কাটার মেশিন

দেশের জমিতে ব্যবহারের সবচেয়ে উপযোগী ও সুলভমূল্যের ধান কাটার যন্ত্র ‘ব্রি হোল ফিড কম্বাইন হারভেস্টার’ উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা। যার দাম পড়বে বিদেশ থেকে আমদানি করা মেশিনের চেয়ে অর্ধেক কম, আবার ফসল নষ্টের পরিমাণও এতে কম হয়।

শুক্রবার সকালে গাজীপুরে ব্রির চত্বরে যন্ত্রটির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

এসময় তিনি বলেন, ব্রির বিজ্ঞানীরা নিজেরা গবেষণা করে ধান কাটার মেশিনটি উদ্ভাবন করেছে। এটি একটি অসাধারণ সাফল্য। এটির ধান কাটার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি, দেশের ছোট ছোট জমিতে ব্যবহারের উপযোগী। বিদেশের ইয়ানমারসহ বিভিন্ন কম্বাইন হারভেস্টারের দাম ২৫-৩০ লাখ টাকা, আর এটির খরচ পড়বে ১২-১৩ লাখ টাকা। হার্ভেস্ট লসও কম।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ব্রির উদ্ভাবিত যন্ত্রটি আমরা যদি স্থানীয়ভাবে তৈরি করে সারা দেশে ব্যবহার করতে পারি তাহলে বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিপ্লব ঘটবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষিকে লাভজনক করতে অনন্য ভূমিকা রাখবে।
এর ইঞ্জিনের ক্ষমতা ৮৭ হর্স পাওয়ার

ব্রির বিজ্ঞানীরা জানান, তাদের উদ্ভাবিত ব্রি হোল ফিড কম্বাইন হারভেস্টারের ইঞ্জিনটি বিদেশ থেকে আনা। অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থানীয়ভাবে তৈরি। এর ইঞ্জিনের ক্ষমতা ৮৭ হর্স পাওয়ার। ঘণ্টায় মেশিনটি ৩-৪ বিঘা জমির ধান কাটতে পারে। জ্বালানি খরচ হয় ঘণ্টায় ৩.৫- ৪ লিটার। ফসল ক্ষতি শতকরা এক ভাগের কম। আর দাম পড়বে মাত্র ১২-১৩ লাখ টাকা। খণ্ড খণ্ড জমিতেও ব্যবহার উপযোগী। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত যেকোনো কম্বাইন হারভেস্টারের তুলনায় এটি ভালো বলে জানান তারা।

এসময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, সদ্য যোগদানকৃত সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংস্থাপ্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।

ব্রির শ্রমিকদের জন্য পাঁচ তলা নতুন আবাসিক ভবন উদ্বোধন: একইদিন কৃষিমন্ত্রী ব্রির চত্বরে ব্রির শ্রমিকদের জন্য নির্মিত পাঁচ তলা নতুন আবাসিক ভবন ‘ব্রি শ্রমিক কলোনি ভবন’ উদ্বোধন করেন। এসময় মন্ত্রী বলেন, নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কৃষি শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মেধা ও মনন আর কৃষি শ্রমিকদের শ্রম ও ঘামে দেশে শতাধিক উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। যা দেশের খাদ্য নিরপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতোই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শ্রমিক-মজুরদের দুঃখ কষ্ট হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন। তাই মুজিব শতবর্ষের উপহার হিসেবে শ্রমজীবী মানুষের আবাসনের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ব্রির নব নির্মিত শ্রমিক কলোনি ভবন এর একটি বাস্তব উদাহরণ।

এদিন দুপুরে মন্ত্রী ব্রির প্রাঙ্গণে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক পুনর্মিলনীতে প্রধান অতিথি হয়ে যোগ দেন। সভায় বিদায়ী সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম ও সদ্য যোগদানকৃত সচিব মো. সায়েদুল ইসলামকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

পুনর্মিলনীতে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আবদুর রৌফ, হাসানুজ্জামান কল্লোল, ওয়াহিদা আক্তার, বলাই কৃষ্ণ হাজরা, আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ এনডিসি, মো. রেজাউল করিমসহ সকল স্তরের কর্মকর্তা- কর্মচারি ও সংস্থাপ্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title