দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর হাতে তৈরি চমৎকার পাট হস্তশিল্প

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ চোখে নেই আলো, মনে আছে বল। আর সেই মনের বল দিয়ে আলোর সন্ধানে পথচলা লালমনিরহাটের একঝাঁক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এরা পড়াশোনার পাশাপাশি নিপুনভাবে তৈরি করছেন পাটজাত পণ্য বিভিন্ন হস্তশিল্প। যা দেখে সবাই মুগ্ধ, পরিবার হচ্ছে লাভবান। অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়ে তারা হতে চান পরিবারের গর্বিত সন্তান।
জানা গেছে, একদল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী লালমনিরহাট জেলা শহরের হাড়িভাঙ্গা এলাকায় আরডিআরএস বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার আবাসিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের হাতে পাট থেকে রশি তৈরি করে তা দিয়ে বানাচ্ছেন ব্যাগ, শিকা, ওয়াল মেট, টেবিল মেটসহ নানা ধরনের পাটজাত পণ্যের বিভিন্ন দ্রব্য।
তাদের মনের মাধুরীতে নিখুঁতভাবে তৈরি এসব পাটজাত দ্রব্যের বেশ চাহিদা রয়েছে। ফলে স্থানীয় একটি হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করছে এই পাটজাত দ্রব্যগুলো।
স্কুল ও কলেজে যাওয়ার আগে ও পরে শিমুল মোহন্ত, লাইলী আখতার, বাবলু মিয়া, মনিষা খাতুনসহ ২৩ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সম্মিলিতভাবে কাজ করেন এসব পাটজাত দ্রব্য তৈরিতে। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা কাজ করেন তারা। পড়াশোনাতেও তারা ভালো, কাজেও দক্ষ।
দশম শ্রেণির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিমুল মোহন্ত বলেন, ‘আমাদের চোখে আলো নেই ঠিকই কিন্তু মনের আলো আছে। সেই আলোই আমাদের পথ দেখায়, এগিয়ে চলার নির্দেশনা দেয়। মনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে হাতের কাজ শিখেছি এবং কাজ করে যাচ্ছি। আমরা কোনোদিন বাড়ি ফিরে গেলে পাটজাত পণ্য তৈরি করে আয় করতে পারবো। এটাই হবে আমাদের জীবিকার উপায়।’
দ্বাদশ শ্রেণীর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মনিষা খাতুন বলেন, ‘পাট দিয়ে পন্য তৈরি করতে ভালো লাগে। আমরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলে পিছিয়ে থাকতে চাই না। আমরাও পথ চলতে চাই সমান তালে। আমরা তিন মাসের প্রশিক্ষণে হাতের কাজ শিখে ফেলেছি। স্যার-ম্যাডামরা সব সময় আমাদের সহযোগিতা করেন।’
সংস্থাটির কম্প্রিহেনসিভ স্কুল আই হেলথ প্রোজেক্ট সিএসইএইচপি প্রকল্পের সহায়তায় একবছর আগে তিন মাসের জন্য পাটজাত পণ্য তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের। পড়াশুনার পাশাপাশি পাটজাত পণ্য তৈরি করে যা আয় হচ্ছে তা জমা হচ্ছে এই শিক্ষার্থীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এতে করে খুবই খুশি শিক্ষার্থীরা।
আরডিআরএস বাংলাদেশের এভেনজেলিক্যাল লুথারান চার্চ ইন আমেরিকা প্রকল্পের সমন্বয়কারী রাশেদুল আরেফিন বলেন, ‘স্থানীয় হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান নীলমাধবসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই শিক্ষার্থীদের তৈরি পাটজাত পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছে। আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। সবসময় এই শিক্ষার্থীদের পাশে আছি আমরা। তারা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত পাশেই থাকবো।’
আরডিআরএস বাংলাদেশ’র কম্প্রিহেনসিভ স্কুল আই হেলথ প্রোজেক্ট সিএসইএইচপি প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মুনিম হোসেন প্রতীক বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে এই শিক্ষার্থী যখন নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাবে তখন যেন তাদের এলাকার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদেরও এই কাজের প্রশিক্ষণ দিতে পারে সেভাবেই তাদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title