মিজানুর রহমান, শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ শেরপুর জেলা সদরের বাজিতখিলা ইউনিয়নের দরিদ্র রিক্সাচালক দুলাল মিয়ার ছেলে সুমন ইলেক্ট্রিক ম্যাকানিকের কাজ শিখে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করে আসছিলো। একই সাথে সে লেখাপড়া করে আসছে।
ইউটিউবে বিভিন্ন ইলেকট্রিক সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি তৈরীর প্রযুক্তি দেখে নিজে নিজেই শিখে এখন ক্যামেরাসহ ড্রোন, ফ্যান, রিচার্জেবল হট এয়ারগান, রিচার্জেবল পাওয়ারফুল এয়ারকুলার, ওয়ারলেস, সিসি টিভি ক্যামেরা, ফ্লাইং হেলিকাপ্টার, গোপন সিসিটিভি ক্যামেরা, ৫ ধরনের এয়ারফোন, সিমছাড়া ওয়াইফাই রাউডার, পাওয়ারফুল ওয়াটার পাম্প, হ্যান্ড কন্ট্রোল আরসি ড্রোন, অটো স্যোলার লাইটসহ অসংখ্য ইলেক্ট্রিক সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি তৈরী করছে নিজেই।
পুরাতন ফেলে দেয়া ইলেক্ট্রিক যন্ত্রাংশ, কাগজ, গাম, প্রয়োজনে নতুন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে নানা আকর্ষনীয় খেলনা, ব্যবহার্য সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি তৈরী করে আসছে।
সে এসব যন্ত্রপাতি হাতে কলমে তৈরী করে ভিডিও ধারন করে তা তার নিজস্ব ইউটিউ চ্যানেলে ছেড়ে দিয়ে মাসে ৭০ হাজর থেকে একলাখ টাকা আয় করে আসছে। এতে তার পরিবারের অভাব গোছাতে সক্ষম হয়েছে। এ পর্যন্ত সে ৬ শতাধিক যন্ত্রপাতি তৈরীর ভিডিও ইউটিউব চ্যানেলে ছেড়েছে। একই সাথে চলছে তার লেখাপড়াও। ২০২০ সালে সে এইচএসসি পাস করে শেরপুর সরকারী কলেজে স্নাতক শ্রেণীতে লেখা পড়া করছে সে।
রিক্সাচালক বাবা দুলাল মিয়া ও সমতাবানুর ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সুমন ৩য় সন্তান। তার জীবনকে ঘিরে রয়েছে নানা গল্প। সুমন জানায় তার জীবনের পরিবর্তনের কথা।
সুমন জানায়, রিক্সচালক বাবা অনেক কষ্ট করে আয় করে আমাদেরকে লালন পালন করেছে। আমরা একটি ঝুপড়ি ঘরে গাদাগাদি করে থাকতাম। আমার পরিবারের কষ্ট দেখে আমি ভাবতাম কিভাবে টাকা আয় করা যায়। আর এরপর থেকে আমি ইলেক্ট্রেশিয়ানের কাজ করা শুরু করি। অনেক কষ্টে এসএসসি পাস করে শেরপুরের ডাঃ সেকান্দর আলী কলেজে আমি বিনা পয়সার ওয়াইফাই লাইনের সাহায্যে ইউটিউবে ঢুকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরীর বিষয়টি দেখে আমিও তা শুরু করি। প্রথমে খালি ম্যাচের প্যাকেট দিয়ে একটি এয়ারকাপ্টার তৈরী করে ইউটিউবে দেই। এটি ব্যাপাক সাড়া পড়ে। নয়কোটি ভিউ হয়। এরপর থেকেই আমার সামনের দিকে পথচলা। এখন পর্যন্ত আমি ৬শাতাধিক যন্ত্রপাতি ইউটিউবে ছেড়েছি। এতে মাসে ইউটিউব থেকে আয় হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। ফলে আমার সংসারের অভাব এখন আর আগের মতো নেই।
বর্তমানে আমি একটি ড্রোন বানিয়েছি। এতেও আমি সফল। আমি দেশের সবচেয়ে বেশী ওজনবাহী একটি ড্রোন তৈরী করব। যে ড্রোন মশক নিধন, কীটনাশক নিধন ঔষধ ছেটাতে পারবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের তথ্যচিত্র ধারণ করতে পারবে। আমার আশা আমি যেন শেরপুরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আমি এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই।
এ ব্যাপারে তার বাবা দুলাল মিয়া জানায়, আমি অনেক কষ্ট করতাম। রিক্সা চালাইতাম। এহন আমার অটোগাড়ী। ঝুপড়ি ঘরও নেই। এহন আধাপাকা ঘরে থাহি। এসবকিছুই সম্ভব ঐইছে আমার পোলার জন্য।
এ ব্যাপারে তার মা সমতাবানু জানায়, আমরা অনেক কষ্ট করছি একসময়। আমি জীবনেও ভাবি নাই আমার পোলা সুমন গরিব ঘরে থাইক্কা এতো কিছু করবো। আমি ওরজন্য বোতলের পাস, ম্যাচের খুল, পালাস্টিকের কৌটা আরও কতকিছু কুড়াই আনয়্যা দিতাম।