অনলাইন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ব্রিটেনের আইনের আদলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করবে সরকার। ওই দেশগুলোর আইনে ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধের জন্য আরো কঠোর শাস্তি থাকলে তা এ দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যোগ করা হবে। গত সোমবার ভয়েস অব আমেরিকায় প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভয়েস অব আমেরিকার প্রশ্ন ছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ থেকে সাংবাদিক এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটা কিন্তু শুধু বাংলাদেশে না, এটা কিন্তু পৃথিবীর সব দেশেই আছে। আমেরিকায়ও আছে, তারপর ইংল্যান্ডে আছে, সব দেশেই কিন্তু নেওয়া আছে।’
তিনি ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ মোকাবেলায় গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই কিন্তু ডিজিটাল আইনটা রয়ে গেছে। আমাদের দেশেও সেভাবে আছে। তারপরও আমরা কিন্তু এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ। এমনকি আমাদের দেশে আগে এমন একটা আইন ছিল, যখন মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় ছিল, যেকোনো সমন ছাড়া যেকোনো সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করতে পারত। আমি (আওয়ামী লীগ সরকার) আসার পর সেগুলো বন্ধ করে সহজ করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের হয়রানির অভিযোগ নাকচ করেন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক নামেই পরিচিত, কেউ যদি এখন আমার একটা মন্ত্রণালয়ে ফাইল চুরি করার চেষ্টা করে, তাতে কি তাকে পুরস্কৃত করতে হবে? কোনো সভ্য দেশে এটা করলে কি ব্যবস্থা হয় তার বিরুদ্ধে? হাতেনাতে যেখানে ধরা পড়ল, এরকম হয়তো একজন একটা ঘটনা শুধু একবারই ঘটাল না, একবার ধরা পড়ার পর সে মুচলেকা দিয়ে আবার একই ঘটনা ঘটাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সাংবাদিককেই এখন ‘হিরো’ বানানো ও পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিষয়টি তাঁর কাছে সহজ মনে হয় না।
ভয়েস অব আমেরিকার প্রশ্ন ছিল, আইনমন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু কিছু ধারা সংশোধন বা সংস্কারের কথা বলেছেন। আপনারা কী সেই প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হবেন? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখি যে আমেরিকায় ডিজিটাল আইনে কী আছে, ইংল্যান্ডের কী আছে অথবা ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে কী আছে বা অন্য দেশে কী আছে। তা দেখে তার সঙ্গে আমরা দেখব সেখানে আমাদের আইনে কোথায় কম আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে যদি আমরা দেখি, আমাদের আইনের থেকেও কঠিন কোনো শাস্তির ব্যবস্থা আছে সেটাও আমরা সংস্কার করে দিব। আমেরিকার আইনটাকেই আমরা সামনে নিয়ে আসছি যে ওখানে কী কী আছে আমরা দেখি। সেটা দেখেই আমরা করব।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, যে অপরাধীই হোক তাদের ফিরিয়ে দিয়ে সাজা কার্যকর করা উচিত। সে ব্যাপারে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। তবে এটি এখন সম্পূর্ণ নির্ভর করে ব্রিটিশ সরকারের ওপর। তারা কি সেই আসামি সেখানে রেখে তাদেরকে লালন-পালন করবে না শাস্তিটা কার্যকর করতে দিবে! এটা তাদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির সঙ্গে আর আলোচনার টেবিলে বসতে ইচ্ছে করে না। বিএনপির সঙ্গে বসলে পোড়া মানুষের গন্ধ পাওয়া যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে কিন্তু কারও কোনো অভিযোগ নেই। তখন আমাদের ছিল ১৪ দলীয় জোট, আর বিএনপি নেতৃত্বে ছিল ২০ দলীয় জোট। তাদের জোট ৩০০ সিটের মধ্যে তারা পেয়েছিল ২৯টা, বাকি সিটগুলো কিন্তু আমরা পেলাম। সেটা থেকেই তো বিএনপির যে অবস্থানটা, জনগণের কাছে সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়।’
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকার পরামর্শেই কিন্তু র্যাবের সৃষ্টি। জঙ্গিবাদ নির্মূলসহ আইনশৃঙঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে র্যাব গঠন করা হয়েছে। যখন একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায়, আমরা সবকিছু ঠিকমতোই চালাচ্ছি, তখন হঠাৎ করে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বোধগম্য নয়।’ তিনি বলেন, ওই নিষেধাজ্ঞায় জঙ্গিরা উৎসাহিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, র্যাবের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে সবকিছুই আমেরিকা করেছে। র্যাবের কোনো সদস্য অপরাধ করলে তার বিচার হয়। র্যাবের কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসি, যেটা অন্য কোনো দেশে নেই, এমনকি আমেরিকাতেও নেই। এই আইনের শাসনটা আমাদের দেশে আছে।