মাসুদ হাসান মোল্লা রিদম,ঢাকা : ‘দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর সব কিছু যখন স্থবির হয়ে পড়ে, তখন অনেক মানুষ খাবারের জন্য রাস্তায় নেমে আসেন। এমনকি রাতেও অনেক মানুষ রাস্তায় নেমে আসতেন। পুলিশে চাকরি করার কারণে বাইরে বের হয়ে এমন দৃশ্য দেখে খুব খারাপ লাগে। তখনই ভাবতে থাকিÑ এসব মানুষের জন্য কিছু একটা করা যায় কিনা। আমার সীমিত সামর্থ্যরে পাশাপাশি বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাইদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ শুরু করি। সেই টাকায় খাবার কিনে অসহায় মানুষের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি। আমার পরিবারের সদস্যরাও এই উদ্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
বাংলাদেশ করোনা চলাকালীন সময়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো পুলিশ কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) এমএম মঈনুল ইসলাম এভাবেই তার মানবিক উদ্যোগের কথা বলেন। তিনি রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন।
শুধু খাদ্য সহায়তাই নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সংগ্রহ করেও পুলিশ সদস্য, হাসপাতাল এবং সাংবাদিকদের মধ্যেও বিতরণ করেছেন তিনি। এর মধ্যে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫০টি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে ৪০টি পিপিই দিয়েছেন তিনি। ৩৪তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবরের দায়িত্বেও নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি এখানকার ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, দেশে তখনো করোনার সংক্রমণ শুরু হয়নি। তখন আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এআইএস (অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম) গ্র্যাজুয়েট নেটওয়ার্কের একটি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিই, তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করব। করোনা শুরুর পর সেই কাজ আমরা করেছি। কিন্তু যখন দেখলাম মানুষের ঘরে খাবার নেই, অসহায় মানুষ রাস্তায় নেমে আসছেন, তখন ঠিক করলাম খাবার নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
এই চিন্তা থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই সম্মিলিতভাবে কিছু একটা করতে হবে। তখন দেশে ও দেশের বাইরের বন্ধু এবং স্বজনদের কাছে একটা মেসেজ পাঠালাম। সবাই ভালো সাড়া দিল। মার্চের শেষের দিকে ১১০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিতে সক্ষম হই আমরা। আর এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গুলশান, হাতিরঝিল, তেজগাঁও, মিরপুর, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে এ সহায়তা দেওয়া হয়। এ তালিকায় পত্রিকার হকার, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং চলচ্চিত্র সমিতির অনেক দুস্থ শিল্পীও রয়েছেন।
এসি মঈনুল ইসলাম বলেন, রমজান মাসে ইফতারি সহায়তার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখি আমি। এবার এ টাকা দিয়ে মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। আমার বোনসহ পরিবারের সদস্যরাও এ উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। যতদিন দেশে এই পরিস্থিতি চলবে, আমাদের চেষ্টা থাকবে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার। এক সময় হয়তো করোনা থাকবে না, তখন সহায়তা করার মতো অসহায় লোকও থাকবে না। তাই এখন এই সংকট সবাইকে একসঙ্গেই মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের এই মানবিক কাজে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই নিলয়, সায়েম, বাপ্পি, হাবিব ও নাঈম অনেক সহায়তা করেছেন।