নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটাসহ সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এর ফলে প্লাবিত হচ্ছে তাহিরপুর, ছাতক, দোয়ারা বাজার, মধ্যনগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ডুবে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিম্নাঞ্চলের পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষকে।
এদিকে শনিবার থেকে বর্ষার পানিতে সুনামগঞ্জের হাওর ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। গতকাল দুপুরে তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের সূত্রখলা এলাকার প্রায় ২০০ গজ রাস্তা ডুবে যায়। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের পানি যাওয়ার জন্য সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ গবেষণা করে প্রায় দেড় দশক আগে এই ডুবন্ত রাস্তা করেছিল।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচে আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৪৫ মিলিমিটার। তবে ওই সময়ে চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২২০ মিলিমিটার।
এদিকে সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং টানা তিন দিনের ভারি বর্ষণে সোমেশ্বরী, উব্দাখালী নদী ও মনাই নদীর পানি বাড়ছে। এতে এই অঞ্চলের রাস্তাঘাট ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার চামরদানী, বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ও বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও মধ্যনগর মহিষখলা সড়কের নিচু অংশ তলিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। তিন দিনে পানি বেড়েছে দুই ফুটের মতো।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা মোকাবেলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’
এতে ভোগান্তিতে পড়েন লক্ষাধিকেরও বেশি মানুষ। এমনকি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা আতঙ্কে ভাটির ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, ঢলের পানি যেভাবে বাড়ছে এতে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ও উজানের পাহাড়ি ঢল নামায় সুনামগঞ্জের সুরমা, যাদুকাটা, কুশিয়ারাসহ সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সুনামগঞ্জের স্বল্পমেয়াদি বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তই হয়েছে ৭৪ মিলিমিটার। আজ ও আগামীকালও ঢাকায় বৃষ্টিপাতের একই রকম প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ৪ জুলাইয়ের দিকে বৃষ্টি কিছুটা কমতে পারে। আগামী এক সপ্তাহ ঢাকায় কমবেশি বৃষ্টিপাত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় (আগামীকাল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তত্সংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে এই সময়ে এ অঞ্চলের সুরমা, যদুকাটা, সারিগোয়াইন ও সোমেশ্বরী নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে। এতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার কিছু কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৪৪টি স্টেশনের ৩৫টিতে বৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেটে, ১৩৭ মিলিমিটার। এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯৪ মিলিমিটার, ঢাকায় ৮২ মিলিমিটার, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৭৪ মিলিমিটার এবং টাঙ্গাইলে ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।