নিজস্ব প্রতিবেদক: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর পৃথক ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ গড়ার কাজ শুরু করেছেন। এর সঙ্গে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ আরো কয়েক জনও সম্পৃক্ত থাকছেন।
তবে এর উদ্যোক্তারা এখনই এটিকে পৃথক রাজনৈতিক মঞ্চ বা জোট বলতে চান না। তারা বলছেন, ‘রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তর ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমরা একসঙ্গে পথ চলতে শুরু করেছি।’
গণসংহতি আন্দোলন, ছাত্র-যুবক-শ্রমিক অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্রচিন্তা—এই চারটি সংগঠন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যেও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। চারটি সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কর্মসূচির মধ্যে থাকছে সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান ও সমাবেশসহ বছরব্যাপী নানা উদ্যোগ। চারটি সংগঠনের ব্যানারে পৃথক মঞ্চের বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি গতকাল সোমবার ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা গণমানুষের জন্য কাজ করছি। মানুষের মুক্তির সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ে একসঙ্গে পথচলার চেষ্টা করছি। ন্যূনতম লক্ষ্য নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করেছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। গণমানুষের বৃহত্তর স্বার্থে আরো অনেককেই আমরা এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও মাহমুদুর রহমান মান্না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেরও নেতা। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে নিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শুরু থেকেই জাফরুল্লাহ-মান্না সম্পৃক্ত। সেক্ষেত্রে তাদের দুই জনের পৃথক আরেকটি মঞ্চে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জোনায়েদ সাকিসহ অন্যরা বলছেন, ‘তারা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত থেকে সেখানে যে কাজগুলো করছেন সেটির সঙ্গে আমাদের প্রক্রিয়ার সম্পর্ক নেই। এর বাইরে সাধারণ মানুষের জন্য তারা যে কাজগুলো করছেন সেটির সঙ্গেই নতুন প্রক্রিয়ার সম্পর্ক।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও মাহমুদুর রহমান মান্না যেমন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, একইভাবে জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলনও ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’-এর অন্যতম শরিক। বিষয়টি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সাকি ইত্তেফাককে বলেন, গণসংহতি আন্দোলন বাম জোটের সঙ্গে আছে, থাকবে। বাম জোট অর্থনৈতিক বৈষম্যসহ কিছু সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে কাজ করছে। কিন্তু ক্ষমতার রাজনীতির প্রশ্নে বাম জোটের সঙ্গে আমাদের নতুন প্রক্রিয়ার রূপরেখাগত পার্থক্য রয়েছে।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা থেকে ডাকসুর ভিপি হওয়া নুরুল হক নুর গত কয়েক মাস ধরেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কথা বলছেন। ইতিমধ্যে তিনি সেই প্রক্রিয়া শুরুও করেছেন। যেটির প্রাথমিক ব্যানার হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে ‘ছাত্র-যুবক-শ্রমিক অধিকার পরিষদ’। জানা গেছে, কোটা পদ্ধতি সংস্কারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে ওঠা সাধারণ ছাত্রদের সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে সেটিকে রাজনৈতিক সংগঠনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন সাবেক ভিপি নুর।
এদিকে, জাফরুল্লাহ চৌধুরী আবার ‘ভাসানী অনুসারী পরিষদ’ এরও চেয়ারম্যান। এম এ মতিনের মৃত্যুর পর তাকে এই সংগঠনের চেয়ারম্যান করা হয়। জাফরুল্লাহ-সাকি-নূরের নতুন এই প্রক্রিয়ার ব্যানারে গত ২৮ নভেম্বর মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে একই মঞ্চে বক্তব্যও রেখেছেন তারা।