মতলব উত্তর (চাঁদপুর) : জাটকা সংরক্ষণে দুই মাসের সময়সীমা শেষ। তাই কাল শুক্রবার থেকে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় জাল পড়বে জেলেদের। এসময় ইলশেগুড়ি বৃষ্টির মধ্যে জালে ধরা দেবে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশ। সেই সুযোগ পেতে জেলেদের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে আজ।
চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল মালোয়পাড়া এলাকার জেলে হরিপদ বর্মন। নদীতে মাছ ধরছেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে জাল-নৌকা যা আছে তা নিজের পুঁজিতে নয়। মহাজনের কাছ থেকে ধার-দেনায়। সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে না নামলেও পরিবারে নেমে আসা অভাব অনটনের দুষ্ট ক্ষত তার পিঠে চাবুক মারছে।
কেবল হরিপদ বর্মন নয়, চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনাপাড়ের জেলেরা দুই মাসের জন্য পেশা হারিয়ে দুর্ভোগে ছিলেন। তবে অভিযোগ যাই হোক, আবারো নদীতে মাছ শিকারে যাবেন তারা। সেই জন্য জাল বুনন আর নৌকা প্রস্তুতে ব্যস্ত এখন জেলের দল।
জাটকা সংরক্ষণ হলে ইলিশ বড় হবে। তাই দুই মাসের জন্য ছয়টি অভয়াশ্রমে সবধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এতে বাদ যায়নি চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাও। ফলে মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস বন্ধ থাকার পর, আগামীকাল পহেলা মে শুক্রবার আবারো এই জনপদের অর্ধ লক্ষাধিক জেলের জাল পড়বে নদীতে।
গতকাল বুধবার দুপুরে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর দশানী এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, জেলে হরিপদের মতো অন্যরাও মাছ ধরার শেষ মুহ‚র্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একই চিত্র পাশের আমিরাবাদ এবং বোরোচরেও। সেখানকার জেলে নিত্ত্যরঞ্জন বর্মন বলেন, অনেক কষ্টে ছিলাম গত দুই মাস। সরকারি যে চাল পেয়েছি তা দিয়ে মাত্র ১০ দিন চলেছে। তারপর যে অন্য কাজ করে আয় করব সেই পরিস্থিতিও ছিল না। কারণ, করোনা আতঙ্কে অর্ধাহারে অনাহারে ঘরেই কেটেছিল। এতে পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে কষ্টের সীমা ছিল না।
রাজা মিয়া নামে আরেক জেলে বলেন, গতবারের মতো এবারো প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে জালে। সেই অপেক্ষায় গত দুই মাসের কষ্ট ভুুলে যেতে চাই। তবে জাল-নৌকা যা ছিল অনেক জেলের-ই তা নিজের পুঁজিতে নয়। মহাজনের কাছ থেকে ধার-দেনায়।
তবে সরকারি সহায়তার চাল নিয়েও জেলেদের নানা অভিযোগ ছিল। তাদের অভিযোগ, প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার নিয়ম থাকলেও চাল পেয়েছে ৩২-৩৫ কেজি। আর চালের বিষয় জেলেদের এমন অভিযোগ স্বীকার করে একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জানান তার সীমাবদ্ধতার কথা।
জেলেরা আরো বলেন, জেলেদের চাল সরকারী ভাবে বরাদ্দ কম দেওয়া হয়েছে। ফলে জেলের মধ্যে বরাদ্দ চাল বিতরণ করতে গিয়ে অন্যদের কম দিতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতি হয়েছে চাঁদপুরে সরকারি তালিকায় থাকা প্রায় ৫২ হাজার জেলে পরিবারের।
জাটকা সংরক্ষণে দুই মাসের জন্য নদীতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও মার্চ-জুন, এই চারমাসে জেলেরা ৪০ কেজি হারে চাল পেয়ে থাকেন।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী জানান, জাটকা সংরক্ষণে অন্য বছরের চেয়ে এবার কিছুটা নমনীয় ভ‚মিকা নিতে হয়েছে জেলা টাস্কফোর্সকে। কারণ, করোনা পরিস্থিতির কারণে মানবিক আচরণ করতে হয়েছে জেলেদের। তাই একই সঙ্গে যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছে তাদের লঘুদÐ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, এই সময় প্রায় তিন মেট্রিকটন জাটকা এবং ২৮ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে।
ইলিশ গবেষক, বিশিষ্ট মৎস্য বিজ্ঞানী, চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে তাদের গবেষণার ফলে যা তথ্য উপাত্ত মিলেছে-তাতে আশা করা যাচ্ছে, বিগত বছরের চেয়ে এবার আরো বেশি পরিমাণ ইলিশ আহরণ করতে পারবে জেলেরা। ফলে গত বছরের ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন ছাড়িয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিকটনে উন্নীত হবে।
Prev Post
Next Post