অনলাইন ডেস্ক: জমি সংক্রান্ত অপরাধ ঠেকাতে আইন করছে সরকার। ইতোমধ্যে জমি সংক্রান্ত ২২ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করে আইনের খসড়া তৈরি করে- তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১’ শীর্ষক এ আইনের খসড়ায় অন্যের জমির মালিক হতে জাল দলিল তৈরির পাশাপাশি মালিকানার চেয়ে বেশি দলিল করা, অতিরিক্ত জমি লিখে নেওয়া, আগে বিক্রি বা হস্তান্তরের পরও গোপনে বিক্রি করা, বায়না করা জমি পুনরায় বিক্রি করতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া কিংবা ভুল বুঝিয়ে দানপত্র তৈরির মতো অপরাধগুলো হচ্ছে বলে ওই খসড়ায় তুলে ধরা হয়েছে।
এ ছাড়া সহ-উত্তরাধিকারীকে ঠকিয়ে নিজের অংশের চেয়ে বেশি জমি নিজের নামে দলিল করে নেওয়ার মতো অপরাধের কথাও ওই খসড়ায় তুলে ধরা হয়েছে।
শনিবার প্রস্তাবিত আইনটির প্রাথমিক খসড়া (বিল) সবার মতামতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (https://minland.gov.bd/) প্রকাশ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আবদুল্লাহ আল নাহিয়ান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, মতামত নেওয়ার পর খসড়া বিলটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন মিললে বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) ডিসি সম্মেলনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অবৈধ ভূমি দখলকে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় এনে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১’ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। ভূমি দস্যুতা রোধেও এ আইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে ভূমি লোভী কোনো ব্যক্তির জালিয়াতি বা প্রতারণার মাধ্যমে এবং অন্যের সঙ্গে যোগসাজশ করে দলিল করে বা কোনো দলিল ছাড়াই অবৈধভাবে ভূমির দখলগ্রহণ বা দখলগ্রহণের চেষ্টা বা এর ক্ষতি রোধে ভূমিকা রাখবে এ আইন।
সেদিন তিনি জমির ক্ষেত্রে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তার নামা) সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে বলেও জানান। তিনি আমমোক্তার নামার মাধ্যমে যেসব প্রতারণা, জালিয়াতি ও দুর্নীতি হচ্ছে- তা প্রতিরোধের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মন্ত্রী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ মামলায় (এলএ কেস) পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ব্যবস্থা বাতিল করার ব্যাপারটি বিবেচনাধীন আছে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের সময় পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি হয়। বিশেষত গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ এটার মাধ্যমে অসাধু ব্যক্তির দ্বারা প্রতিনিয়ত প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এজন্য বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতীত, সাধারণভাবে এলএ কেসে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বন্ধ করার বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে।
খসড়ায় যে ২২টি অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো নিচে দেওয়া হলো-
১. অন্যের জমির মালিক হতে জাল দলিল তৈরি।
২. মালিকানার অতিরিক্ত জমির দলিল করা।
৩. মালিকানার অতিরিক্ত জমি লিখে নেওয়া।
৪. আগে বিক্রি বা হস্তান্তর গোপন করে জমি বিক্রি।
৫. বায়না করা জমি আবার বিক্রি করতে চুক্তি করা।
৬. ভুল বুঝিয়ে দানপত্র ইত্যাদি তৈরি করা।
৭. সহ-উত্তরাধিকারীকে ঠকিয়ে নিজের অংশের চেয়ে বেশি জমি নিজের নামে দলিল করে নেওয়া।
৮. সহ-উত্তরাধিকারীকে ঠকিয়ে নিজের অংশের চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করা।
৯. অবৈধ দখল।
১০. সহ-উত্তরাধিকারীর জমি জোরপূর্বক দখলে রাখা।
১১. অবৈধভাবে মাটি কাটা, বালি উত্তোলন ইত্যাদি।
১২. জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা।
১৩. বিনা অনুমতিতে ভূমির উপরের স্তর (টপ সয়েল) কেটে নেওয়া।
১৪. অধিগ্রহণের আগে জমির মূল্য বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত মূল্যে দলিল নিবন্ধন।
১৫. জনসাধারণের ব্যবহার্য, ধর্মীয় বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জমি দখল।
১৬. বিনা অনুমতিতে পাহাড় বা টিলার পাদদেশে বসতি স্থাপন।
১৭. আবাসন খাতের ডেভেলপারের জমি, ফ্ল্যাট হস্তান্তর ইত্যাদি সম্পর্কিত অপরাধ।
১৮. সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জমি ইত্যাদি বেআইনি দখল।
১৯. নদী, হাওর, বিল ও অন্যান্য জলাভূমির শ্রেণি পরিবর্তন।
২০. অবৈধ দখল গ্রহণ ও দখল বজায় রাখতে পেশীশক্তি প্রদর্শন।
২১. পাশ্ববর্তী ভূমি মালিকের জমির ক্ষতি করা।
২২. অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা ইত্যাদি।