চিএনায়িকা মাহির স্বামী রকিবের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি তার স্বামীর ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ তুলে দাবি করেছেন, পুলিশ এবং স্থানীয় দুর্বৃত্তরা তাদের জমি ও ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান জোর করে দখল করে নিচ্ছে। তবে মাহির এই অভিযোগের বিষয় মানতে নারাজ জমির প্রকৃত মালিক ইসমাইল লাদেন। তিনি জানিয়েছেন, আদালতের রায়ে জমিটি তাদের হওয়ার পরও সেটি দখল করে রেখেছে মাহির স্বামী রাকিব সরকার। তিনিই (রাকিব সরকার) আমাদের জমি দখল করে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

শুক্রবার বিকালে ইসমাইল সংবাদ সম্মেলন করে জানান, অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি দাবি করেছেন, তার স্বামীর ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ‘সনিরাজ কার প্যালেস’-এর জমি দখল নিতে দখলদারদের সহযোগিতা করছে পুলিশ। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা।

ইসমাইল বলেন, ‘আমিই জমির প্রকৃত মালিক, যা এতদিন রাকিব জবরদখল করে রেখেছেন।’

স্ত্রীর খ্যাতিকে পুঁজি করে রাকিব সরকার ঘটনা ভিন্ন দিকে নিচ্ছে বলে দাবি ইসমাইলের। তিনি বলেন, অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির দ্বিতীয় স্বামী রাকিব সরকার তার স্ত্রীর খ্যাতিকে পুঁজি করে কিছু হলেই ফেসবুক লাইভে আসেন। এবার মাহি তার স্বামীর হয়ে জমি দখলের অভিযোগ তুললেন পুলিশের বিরুদ্ধে। বাস্তবতা হচ্ছে-নিজের পরিচয় এবং প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে উল্টো জমির মালিক হয়েও আমাদেরকে দখলদার বানানোর চেষ্টা করছেন। আদালতের রায়ে জমিটি আমাদের হওয়ার পরও সেটি দখল করে রেখেছেন মাহির স্বামী। ঘটনা ভিন্ন দিকে নিতে মাহির ফেসবুক আইডি ব্যবহার করা হয়েছে।’

ইসমাইল বলেন, ফেসবুক লাইভে পুলিশ কমিশনার (গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার) এবং অতিরিক্ত কমিশনারকে উদ্দেশ করে রাকিব সরকার এমনভাবে কথা বলেছেন, যেটি হুমকি ছাড়া কিছু নয়। বেঁচে থাকলে দেখে নেবেন বলেও হুমকি দেন রাকিব সরকার। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে এভাবে হুমকি দিতে পারলে আমার মতো সাধারণ মানুষের কী অবস্থা করবে, সেটা সহজেই বোধগম্য।’

রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ধর্ষণসহ তিনটি মামলা রয়েছে বলেও জানান ভুক্তভোগী ইসমাইল। এছাড়া যুবলীগের সর্বশেষ দলীয় কাউন্সিলে পদ না পেয়ে তার নেতৃত্বে গাজীপুরে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাণ্ডব চালানোরও অভিযোগ আছে।

এদিকে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির স্বামী রাকিব সরকারের গাজীপুর মহানগরীর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে সনিরাজ কার প্যালেসে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনায় গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার (জিএমপি) মোল্যা নজরুল ইসলামকে দোষারোপ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন মাহি। তবে জিএমপি কমিশনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

অন্যদিকে মাহিয়া মাহির স্বামী রাকিব সরকার গাজীপুরে যুবলীগের রাজনীতি করেন। তার বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। স্বামীসহ মাহি এখন ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরবে রয়েছেন।

জমির প্রকৃত মালিক ইসমাইল বলেন, আমরা জমির বৈধ দাবিদার। আমরা বলিনি পুলিশ অনৈতিক টাকা দাবি করেছে। অথচ ফেসবুক লাইভে এসে পুলিশের বিরুদ্ধে দেড়কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন রাকিব সরকার। এর আগেও আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছিলেন রাকিব সরকার। প্রমাণ ছাড়া এমন একজন ব্যক্তি এ ধরনের প্রশ্ন তুলতে পারেন না। রাকিবের বিষয়ে পুলিশ কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা কারও জমি দখল করিনি। বরং আইনিভাবে আমরা জমির মালিক, এটি স্পষ্ট করে বলতে চাই।’

পুলিশ যা জানাল:

জিএমপির বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সানোয়ার জাহান জানান, ‘৯৯৯ এ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ ছুটে যান। সেখানে গিয়ে হামলাকারীদের কাউকে পাওয়া যায়নি। শো রুমের জায়গা নিয়ে মালিকানার দ্বন্দ্বে মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের জানিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ওসি।

অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। দুপক্ষের দ্বন্দ্বে পুলিশকে জড়ানো হচ্ছে।’

জিএমপি কঠোর অবস্থানের কারণে গাজীপুরে অপরাধ কমেছে জানিয়ে মোল্যা নজরুল বলেন, একটি শ্রেণি আছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় চাঁদাবাজি করছে, দখলদার, মাদক ব্যবসায় জড়িত; তাদের বিরুদ্ধে জিএমপি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তারা এখন সেলিব্রেটিকে পুঁজি করে আমাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বানোয়াট অভিযোগ এনেছে। এ ঘটনায় আমি কিংবা গাজীপুর মহানগর পুলিশের সংশ্লিষ্টতার কোনো সুযোগ নেই।’

জিএমপি কমিশনার বলেন, রাকিব সরকার জমি দখল করে নিয়েছেন, এই মর্মে প্রতিপক্ষ গ্রুপ মামলার আবেদন করেছে। রাকিবের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও অস্ত্র—ধারায় তিনটি মামলায় পুলিশের এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু) রয়েছে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আমি জিএমপিতে যোগদানের পর কোনো পক্ষই জমির বিষয়টি আমার সামনে আনেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের চিনিও না। মাহির এই অভিযোগে আমি মর্মাহত।’

বিএনপি পরিবারের সন্তান রাকিব করেন চাঁদাবাজি:

রাকিব সরকারের বড় ভাই সুলতান সরকার গাজীপুর জেলা পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক। পরিবহন সেক্টরে বড় চাঁদাবাজি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূলহোতা হিসেবে পরিচিত। তার ভাই ফয়সাল আহমেদ সরকার বর্তমানে গাজীপুর মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক এবং গাজীপুর সিটি কপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আরেক ভাই কামরুল আহসান সরকার গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক। মহানগর বিএনপিনেতা হাসান উদ্দিন সরকার ও শওকত সরকারও তাদের নিকটাত্মীয়।

রাকিব সরকার গাজীপুর মহানগরীতে চাঁদাবাজি, গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মাদকের স্পর্ট পরিচালনা, জমি দখল, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি ও অরাজকতা সৃষ্টি এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীদের লালন করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। তাছাড়া বাসন থানা এলাকাসহ মহানগরীর প্রায় সব ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা চাঁদা নেন। এছাড়া ভোগড়া বাইপাস ফলের আড়ৎ (সামছুদ্দিন সুপার মার্কেট) এবং কাঁচা বাজারে যেসব ট্রাক, পিকাপ আসে সেগুলোর প্রতিটি থেকে ৫০ ও ১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়, যেখানে প্রতিদিন ২০০-২৫০টি গাড়ি আনলোড হয়।

গার্মেন্টেস-এর ঝুট পণ্য না পেলেই শ্রমিক অসন্তোষ করান:

গাজীপুর মহানগরীর প্রায় সব গার্মেন্টেস-এর ঝুট নিয়ন্ত্রণ করে রাকিব সরকার ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য প্রয়োজনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়। বাসন থানা এলাকাধীন ল্যাডন্ডার গার্মেন্টস, বটস গ্যালারী, লালতাপুর গার্মেন্টস, হাসান তানভীর ফ্যাশন লি., লিরিক ফ্যাশন টার্গেট লি., নেটওয়ার্ক ডটকম, মিকি গার্মেন্টস, স্কয়ার লি., টি অ্যান্ড জেড গার্মেন্টস তার লোকজনের নিয়ন্ত্রণে।তারাই প্রতিমাসে মাসে ঝুট নিয়ন্ত্রণে নেয়। কোনো গার্মেন্টস মালিক বা কর্তৃপক্ষ ঝুট দিতে অস্বীকৃতি জানালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উস্কে দেওয়া হয়। তাছাড়া বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে মালিক পক্ষের ওপর আক্রমণ চালায়। এই ঝুট থেকে প্রতি মাসে ৭০/৮০ লাখ টাকা আয় করেন রাকিব। তার ঝুটের ব্যবসা দেখভাল করেন তার ঘনিষ্ট সহযোগী আরিফ, নাজমুল ও আলমগীর।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title