সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় অশনির শঙ্কায় আম পাড়তে শুরু করেছেন সাতক্ষীরার চাষিরা। এবার সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় আমের ফলন কম হয়েছে। তার পরও এ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পাড়তে শুরু করেছেন চাষিরা।
বাজারে গোবিন্দভোগ জাতের আম বিক্রি শুরু হয়েছে। ঝড়ের আগে হাতে থাকা সুযোগটুকু কাজে লাগিয়ে অনেকে অপুষ্ট হিমসাগর আম বাজারে বিক্রি করছেন।
সাতক্ষীরা জেলায় এ বছর আম ভাঙার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। নির্দেশনা অনুযায়ী ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, ক্ষীরশাপাতি, গোলাপখাস, বৈশাখীসহ অন্যান্য আগাম স্থানীয় জাতের আম, ১৬ মে থেকে হিমসাগর, ২৪ মে থেকে ল্যাংড়া ও ১ জুন থেকে আম্রপালি ভেঙে বাজারে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থাকায় এবার সরকারি নির্দেশনা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।
গত বৃহস্পতিবার থেকেই অনেক চাষি গোবিন্দভোগ গাছ থেকে আম ভাঙা শুরু করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা আম চাষি সমিতির সভাপতি লিয়াকাত হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ও করোনায় গত কয়েক বছর চাষিরা আম চাষে লোকসানে আছেন। চলতি মৌসুমে ফলন কিছুটা কম। এবার চাষিরা আশা করেছিলেন ভালো দামে আম বিক্রি হবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আম পাড়ার জন্য আমাদের চাষিদের বলা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। আমের ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে অনেকে গাছ থেকে আগাম আম পাড়তে শুরু করেছে। তবে এসব আম কাঁচা বিক্রি করবেন তারা। ‘
সুলতানপুর বড় বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু বলেন, সরকারি নির্দেশনায় গত বৃহস্পতিবার থেকে গোবিন্দভোগ আম ভাঙা শুরু হয়েছে। বড় বাজারের প্রতিটি আমের আড়তে শুধু গোপালভোগ, গোবিন্দভোগসহ আগাম জাতের আম বিক্রি শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২৮০০ টাকায়। অন্য জাতের আম পাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে গোপনে বাগান থেকেই হিমসাগর আম পেড়ে বিক্রি করছেন। ওই আম ১৬ তারিখের আগে বাজারের আড়তগুলোতে বিক্রি হবে না।
সাতক্ষীরার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার জেলায় আমের ফলন কিছুটা কম। যেসব গাছে আম হয়েছে সেগুলো আকারে ছোট হয়েছে। চলতি সপ্তাহে একটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা শোনা যাচ্ছে। এ জন্য চাষিদের আগাম জাতের আম পাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে অপুষ্ট হিমসাগর আমও পাড়ছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘
বিদেশে আম রপ্তানির বিষয়ে তিনি বলেন, আম রপ্তানির জন্য এবারও সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে শুধু নির্ধারিত বাগানের আম বিদেশে রপ্তানি হবে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য, চলতি বছর জেলায় প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার আম চাষি রয়েছেন।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী আরিফুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আশনির কারণে শর্ত শিথিল করা হয়েছে। একই কথা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানিয়ে বলেন, অপরিপক্ব আম না পাড়াই শ্রেয়।