চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও অংশগ্রহণকারীদের খাবার বিতরণ ও আন্দোলনে সমর্থন করায় চট্টগ্রামের লালদীঘি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী প্রফেসর আরিফ মঈনুদ্দিন ও তাদের পরিবারের ওপর হামলা এবং বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় এস এম আহমদ হোছাইনকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী আরিফ মঈনুদ্দিনের ভাতিজা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তারিন মহিউদ্দিন আজিম।
মামলা সূত্রে জানা যায়,গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্ররা দেশের সর্বত্র তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সমাবেশ, মিছিল, মিটিং এর মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে থাকে। ভুক্তভোগীর চাচা প্রফেসর আরিফ মঈনুদ্দিন জিয়াউর রহমানের আমলে সাবেক মন্ত্রী ও এমপি ছিলেন। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন ও অংশগ্রহণ করেন।
ছাত্র আন্দোলন দমানোর জন্য তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার তাদের স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভাড়াটিয়া মাস্তানদের দিয়ে ছাত্রদের সমাবেশ ও মিছিল মিটিংয়ে হামলা করে প্রতিবাদী ছাত্র-জনতাকে আন্দোলন থেকে দূরে রাখার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। চাচার আদেশে তরুণ উদ্যোক্তা তারিন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের পানি, বিস্কিট ইত্যাদি খাবার সামগ্রী সরবরাহ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এস এম আহমদ হোছাইন ও মো. শাহজাহনের নেতৃত্বে লালদিঘীর আজিম সেন্টার ও অরিয়ন টাওয়ারে ঢুকে লুটপাট করে ভবনের কর্মচারী মোক্তার কাজীসহ অন্য লোকদের মারধর করে ওই ভবনের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিয়ে যায়।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, আহমদ হোছাইনের নেতৃত্বে আজিম সেন্টারের ৪র্থ তলায় অবস্থিত ভুক্তভোগীর ব্যবসায়িক পার্টনারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান SCAP Construction Pvt. Ltd. এর অফিস কক্ষের দরজার তালা ভেঙে রুমের ভিতর প্রবেশ করে ড্রয়ার ভেঙে সেখানে থাকা ৫টি চেক বই ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও নগদ ৫০ হাজার টাকা চুরি করে এবং অফিসের ২টি সিলিং ফ্যান ও ফ্লোরে রাখা ৭টি নতুন ফ্যান, ৫টি চেয়ার, ১টি স্টীল আলমিরা ও ১টি ফ্রিজসহ আরো কিছু জিনিসপত্রসহ মোট আনুমানিক দেড় লক্ষ টাকার মূল্যবান সামগ্রী লুটপাট করে নিয়ে যায়। এছাড়াও অভিযুক্তরা আজিম সেন্টারের ৫ম তলায় কাটুনে রক্ষিত প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা মূল্যের প্রাচীন ও দুষ্প্রাপ্য মূল্যবান আসবাবপত্র ও শীল পাথরের টেবিল চুরি করে নেয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী তারিন মহিউদ্দিন আজিম বলেন, গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের বিভিন্ন সময় নগরীর নিউ মার্কেট কোতোয়ালিসহ বিভিন্ন এলাকায় রুগ্ন ও ক্লান্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করে তাদের সাথে একাত্মতা পোষন করি। এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে আঁতাত করে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এস এম আহমেদ হোছাইন আমার চাচা সাবেক মন্ত্রী প্রফেসর আরিফ মঈনুদ্দিন ও আমাকে না পেয়ে ৪ আগস্ট আমাদের আজিম সেন্টারের কর্মচারী মোক্তার কাজীকে মারধর করে ব্যাপক লুটপাট চালায়।আমি এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তি কামনা করি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আহমদ হোছাইনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
মামলার বিষয়ে কোতোয়ালি থানার অফিসার্স ইনচার্জ মুহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, মামলা তদন্তাধীন রয়েছে এবং আসামিকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা যখন স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পতনের দাবিতে জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন আওয়ামী দোসররা লুটপাট করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। এমন কি ছাত্র আন্দোলনে কেউ সহযোগিতা করলে কিংবা সমর্থন জানালে আওয়ামী নেতাকর্মীরা জানতে পারলে তখন আন্দোলনে সমর্থনকারীদের ওপর নেমে এসেছিল অমানবিক নির্যাতন। লালদীঘির এ ঘটনাও তারই উদাহরণ বলছে এলাকাবাসী। তাই জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি তাদের।