এস.ইসলাম সনেট
কেরানীগঞ্জ(ঢাকা) প্রতিনিধিঃ রাজধানীর কেরানীগঞ্জে বহু প্রতিক্ষিত জামিয়াতুত তারবিয়াহ আল ইসলামিয়া ও বাবরী মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের অনুমতি না মিলায় বাবরী মসজিদের নাম স্থগিত করা হয়েছে। প্রধান অতিথি হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ সফির অনুপস্থিতিতে এর ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর।
বুধবার বেলা ৯ টায় ইসলামী মহা সম্মেলনে দেশের বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম সমকালীন ইসলাম ও ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে আলোচনা করেন। মাওলানা মাহফুজুল হকের সভাপতিত্বে ও মাওলানা মাহমুদুল হকের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব,মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আয়ুবী, মাওলানা খুরশিদ আল কাসেমী,মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন আল রাজি সহ অনেকে।
হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সম্মেলনের প্রধান অতিথি আল্লামা আহমদ সফি উপস্থিত না থাকলেও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খতমে নবুয়তের আমীর আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর ও মাওলানা আবুল হাসান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
প্রায় ২০ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ কাম কমপ্লেক্স টি দেশ এবং দেশের বাহিরের লোকজনের দানের অর্থে নির্মিত হচ্ছে। তিন বিঘা জমির উপর নির্মিতব্য ইতিহাসের স্মারক এ মসজিদটির জমি ক্রয় ও নির্মাণব্যয় নির্বাহে ৩১৩ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ।
মুঘল সম্রাট বাবর ১৫২৮-২৯ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্যা শহরে ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে। মসজিদ নির্মাণের কয়েক শত বছর পর উগ্রবাদী হিন্দুরা তাদের ধর্মের কল্পিত রামচন্দ্রের জন্মভূমির দাবি তুলে। ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রায় পাঁচশত বছরের প্রাচীন মসজিদটিকে ভেঙ্গে দেয় । এর প্রভাব পরে বিশ্ব মুসলিম জাহানে। বাংলাদেশেও ঘটে তার সর্ববৃহৎ বিস্ফোরণ। শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বে বাবরী মসজিদ লংমার্চের মাধ্যমে পরিচালিত হয় স্মরণকালের বৃহত্তর আন্দোলন।সে আন্দোলন বাবরী মসজিদ রক্ষায় বিশ্বজনমত গঠনে রাখে বিশাল ভূমিকা। কিন্তু বিশ্বজনমত, ন্যায়-নীতিবোধ এমন কি নূন্যতম যুক্তিরও কোনো তোয়াক্কা না করে ভারতের সুপ্রীমকোর্ট বাবরী মসজিদকে তার যথাস্থানে হতে বিলুপ্তির নির্দেশ দেয় । ইতিহাসের কলংকজনক এ রায় শান্তিকামী বিশ্ববাসীর মনে ঘৃণার জন্ম দেয়। মুসলিমদের বিশ্বাস আবারো মুক্ত হবে পাঁচশত বছরের পুরোনো এই পবিত্র মসজিদ।বাবরী মসজিদের গম্বুজ থেকে আবার ধ্বনিত হবে আযানের সুমধুর সূর ।
বাবরী মসজিদের রক্তস্নাত ইতিহাস ও বাবরী মসজিদ রক্ষায় শায়খুল হাদীস রহিমাহুল্লাহর ঈমানী আন্দোলনের চেতনাকে জাগরিত রাখতে জামিয়াতুত তারবিয়াহ-কলাতিয়া ক্যাম্পাসে “বাবরী মসজিদ” নামে একটি সুবৃহৎ মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। আধুনিক নান্দনিকতার সাথে বাবরী মসজিদের আদলে প্রাচীন গম্বুজের মিশেলে তৈরি করা হয়েছে মসজিদটির স্থাপত্য নকশা, যা দর্শককে মনে করিয়ে দিবে বাবরী মসজিদের ইতিহাস আর আগামী প্রজন্মের হৃদয়ে জাগিয়ে তুলবে চেতনার মশাল! আর মাদ্রাসাটি হবে দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে আরবির সাথে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে শিক্ষার্থীরা। জালালাইন শ্রেনী থেকে দাওরায়ে হাদিস এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের মাস্টার্স পর্যন্ত পাঠদান করা হবে। কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ায় এর মুল ক্যাম্পাস হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকবে এর শাখা ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাস শুধু দাড়ি ওয়ালাদের নয় দেশের সকল মুসলিমদের জন্য পথ প্রদর্শক।
এসময় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা ও ঢাকা জেলার পুলিশের বিশেষ তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি (অপারেশন) আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে দেশের বরেণ্য আলেমদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। যে কোন প্রকার নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধান করবে।