কেরানীগঞ্জের সিংহনদী প্রভাবশালীদের দখলে,নদী এখন মরা খাল

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বুড়িগঙ্গা দখলের পর এবার প্রভাবশালীরা দখল করতে শুরু করেছে কেরানীগঞ্জের সিংহ নদী। অবৈধ দখলের ফলে দিনে দিনে সিংহভাগ মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে। বিগত পাঁচ দশকে নদীর বিশ কিলোমিটার জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক ভবন ও মার্কেট। নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফসলি জমিতে সেচ ও নৌ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে।সরেজমিনে ঢাকা মাওয়া মহা সড়কের পাশে আব্দুল্লাপুর এলাকায় দেখা গেছে, নদী ক্রমাগত ভরাট করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন ও মার্কেট।কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোহিতায় ভূমিদস্যুরা দুই তীর ভরাট করে কামিয়ে নিচ্ছে কালো টাকা। নদীর তীর ভরাট করে টং দোকান ও দূর্বল পিলার দিয়ে তৈরী করা হয়েছে বহুতল ভবন। এসব স্থাপনায় যে কোন সময় ঘটতে পারে চড়াইলের মতো দুর্ঘটনা।


ভূমিদস্যুরা ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দেখিয়ে কেউবা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেখিয়ে, কেউ বা কোন প্রকার কাগজপত্র না দেখিয়েই দখল করে নিয়েছে সিংহ নদী। অথচ সেকালের লোকজন এ নদী দিয়ে বুড়ীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীতে নৌপথে যাতায়াত করত। তা ছাড়া ব্যবসায়ীরা রাজেন্দ্রপুর, বিক্রমপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, খুলনা, এমনকি ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষেত্রেও এই নদী ব্যবহার করত।

সিংহ নদীটি ধলেশ্বরীর আকশাইল এলাকা দিয়ে রামেরকান্দা, অগ্রখোলা, শিকারীটোলা ও খাড়াকান্দি এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিশেছে। অপরদিকে নদীটির রামেরকান্দা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেলনা, আকশাইল ও কলাতিয়া হয়ে বুড়িগঙ্গার সঙ্গে মিশেছে। ভারত বর্ষের সময় এই খরস্রোতা নদী দিয়ে শত শত হাজার মণের ধান-পাট বোঝাই নৌকা পাল তুলে যাতায়াত করত। সিংহের মতো এই নদীর আওয়াজ ছিল। এ জন্য লোকেরা এই নদীকে সিংহ নদী বলে আখ্যায়িত করেছে।


কেরানীগঞ্জ বাঘাপুর স্কূল এন্ড কলেজ এর শিক্ষক ও সমাজকর্মী লোকমান হোসেন বলেন , অচিরেই একটি উন্নত শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে কেরানীগঞ্জ। নৌপথে যাতায়াত ও পানি নিষ্কাশনের জন্য সিংহ নদীর দরকার। কিন্তু সিংহ নদীর পানিপ্রবাহ ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের কাছে অনুরোধ সিংহ নদী উদ্ধারের। এটা জনগণ ও এলাকাবাসীর দাবি।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, নদীর দুই তীর ভরাট করেছে প্রভাবশালীরা। ফলে আমরা নদীতে গোসল করতে পারি না। নদী এখন নেই।তারা দাবী তোলেন, যদি নদীটি পুন খনন করা হয় তাহলে আমরা নৌ পথে যাতায়াতের সুবিধা পাবো। কৃষিকাজে পানির ব্যবহার করতে পারবো।

এ বিষয়ে ঢাকাজেলা প্রসাশক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন,  ঢাকার কাছের কেরানীগঞ্জের জমির মূল্য অনেক বেশি। এ জন্য কেরানীগঞ্জের খাল ও নদীগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। অতি শীঘ্রই সিংহ নদী আগে যেমন ছিল তা উদ্ধার করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সরকারী খাল নদী কিংবা খাস জমি কেহ অবৈধভাবে দখল করে তাদের বিরুদ্ধে আইননুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তিনি  এ বিষয়ে জনগণের সাহায্য  ও সহযোগিতা কামনা করেন। দখল ও পরিবেশ যাতে নষ্ট না হতে পারে এ জন্য আমাদের সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title