কিছু সচেতনতা পারে করোনা থেকে বাঁচাতে সাংবাদিক অন্তর আহম্মেদ

নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ- করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় সমগ্র বিশ্ব আজ অসহায়।

বিশ্বের শক্তিধর, ক্ষমতাশালী, ধনী রাষ্ট্র থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত রাষ্ট্রগুলো করোনার ভয়াল ছোবলে অসহায়।

গুজব আর অন্ধ বিশ্বাসী বাংলাদেশীরা করোনার নিকট অসহায় আত্নসমর্পণের দ্বারপ্রান্তে। সরকারের শতভাগ আন্তরিকতা, এমপি -মন্ত্রী, নেতা-কর্মী, সশস্ত্র বাহিনী , পুলিশ, বিজিবি, এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহ সচেতন জনতার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্বেও অনেকটা দাওয়াত দিয়ে মরণঘাতী এ ভাইরাসটিকে ঘরে আনছে মানুষ।

মানুষের উগ্রতা, অন্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস, উদাসীনতা, অসচেতনতা ইতিমধ্যেই এদেশে মহামারী ও মানবিক বিপর্যয়ের চরম বার্তা প্রদান করছে। এদেশের জনগণের খুব ছোট একটা অংশ করোনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পারলেও বাকীরা অক্ষম কিংবা একে গুরুত্বহীন মনে করে বিষয়টিকে চরমভাবে হেলা করছে।

যেখানে ইতিমধ্যেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে করোনার ভয়াবহতা নিয়ে চরমবার্তা পাঠিয়েছে আমাদের দেশের প্রতি।

তাদের বার্তা যে কতটুকু সত্য তা গ্রামের বাজার, বিভিন্ন মোড়, গ্রাম্য দোকান, খেলার মাঠ, চায়ের স্টল, পাবলিক পরিবহনের দিকে তাকালেই বুঝা যায়।

গ্রামের অনেক স্থানে কলেজ – বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের দলে দলে ঘুরাফেরা, ক্রিকেট, ফুটবল খেলা, গানবাজনা ও আড্ডা দেখে বুঝার উপায় নাই যে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস নামক মরণঘাতী কোন ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে।

গ্রামের মুরব্বিদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে গেলে তারা হাসাহাসি, পাল্টা ধর্মীয় বাক্যবাণ ছুঁড়ে মারে ।

সারাদেশের আনাচে কানাচে আবার ধর্মীয় গুরুদের অপ্রচার তো চলছেই।

তাছাড়া গ্রামের শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, মধ্যবয়সী,বৃদ্ধ কারো করোনার ভাইরাস জানার ব্যাপারে আগ্রহ নেই।
যেখানে সরকার করোনার ভয়াবহ ছোবল থেকে জাতিকে রক্ষায় লকডাউন, জীবাণু নাশক স্প্রে করা, জনগণকে ঘরের বাইরে না যাওয়া, দরিদ্রদের ঘরে ঘরে খাদ্য সরবরাহ, প্রয়োজনীয় ঔষধ, পানীয়ের ব্যবস্থাসহ সকল জিনিস ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে সরকার।

এতকিছুর পরও বিভিন্ন হাঁটে বাজারে, রাস্তার মোড়ে প্রতিনিয়ত জনতার ভীড় সত্যিই দূর্ভাগ্যজনক।

বিশ্বের প্রভাবশালী, সম্পদশালী, প্রচণ্ড শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো আজ করোনার নিকট অসহায়। দেখুন ইতালি, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইরান, স্পেন, ভারতসহ উন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো করুণ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। প্রায় ২৩ টি রাষ্ট্রে মহামারী চলছে।

করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু মিছিলে বাংলাদেশ নতুন সদস্য। এখানে সর্বত্রই মানুষের অবাধ বিচরণ, অসাবধানতা, খামখেয়ালিপনা, অতি মাত্রায় বন্ধুত্ব, ধর্মীয় গোঁড়ামি, আবেগ প্রবণতা, ধৈর্যের অভাব, উগ্রতা ইত্যাদি কারণে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী ভাইরাস নভেল করোনা (COVID – 19)।

আমরা এখন মহামারীর দ্বারপ্রান্তে, মৃত্যুর মুখে দাঁড়ানো।

সরকারের এত আন্তরিকতা, সতর্কতা, সাবধানতাকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে করোনাকে আমরা আমাদের ঘরে দাওয়াত করে নিয়ে আসলাম।

এখনও সরকার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে আপনাদের জীবন বাঁচাতে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলাসহ সকল পর্যায়ে অর্থ, খাবার, ঔষধ, পোশাকসহ জীবনধারণের প্রয়োজনীয় রসদ পৌছানোর পরও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে রাস্তার মোড়ে বসে খোশগল্প, মাঠে বসে দলে দলে জুয়া খেলা, চা – পান – সিগারেট পান করা, ধর্মের দোহাই দিয়ে গণ জমায়েত, ছুটিতে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি, সরকারি অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দলবেঁধে আড্ডা, গান-বাজনা চলছে সর্বত্র। আর এই অবাধ চলাফেরা, বিদেশ ফেরতদের আত্মীয়ের বা বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে লুকিয়ে থাকা করোনা সংক্রমণের পথকে সুগম করে এদেশকে মহামারীর দিকে ধাবিত করছে।

অথচ, সামান্য সচেতন হলে, পরিষ্কার পরিছন্ন থাকলে এবং সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে তথ্য গোপন না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

তাই, এ অবস্থা থেকে বাঁচতে সচেতন হওয়া, যেকোন কাজ বা বাইরে থেকে এসে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান বা হ্যাণ্ডওয়াসের মাধ্যমে হাত, পা, মুখমণ্ডল ধৌত করা, জীবাণু নাশক ঔষধ ব্যবহার করা, একদম প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে না যাওয়া, মানুষ থেকে দুরত্ব বজায় রাখা, বাসস্থান, শোবার ঘর, রান্নাঘর সহ বাড়ির প্রত্যেকটি জায়গায় জীবাণু নাশক স্প্রে করা। বাঁচতে হলে নিয়মগুলো মানতেই হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title