ওয়ার্নার-মার্শের সেঞ্চুরির পর জ্যাম্পার স্পিনে অস্ট্রেলিয়ার জয়
দুই পরাজয়ে যাত্রা শুরুর পর টানা দুই ম্যাচ জিতল অস্ট্রেলিয়া।
নিজস্ব প্রতিবেদক: বেঙ্গালোরের এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ৩৬৮ রানের লক্ষ্যে জ্যাম্পার লেগ স্পিনে ২৭ বল বাকি থাকতেই ৩০৫ রানে গুটিয়ে গেছে বাবর আজমের দল।
দুই পরাজয়ে যাত্রা শুরুর পর টানা দুই ম্যাচ জিতল অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তান দুই জয়ের পর হারল টানা দুই ম্যাচ।
বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ১২৪ বলে ১৬৩ রানের ইনিংস খেলেন ওয়ার্নার। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। মার্শের ব্যাট থেকে আসে ১২১ রান। দুজনের উদ্বোধনী জুটির সংগ্রহ ২৫৯ রান।
পরে বল হাতে ৫৩ রানে ৪ উইকেট নেন জ্যাম্পা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ম্যাচেও ৪টি শিকার ধরেন ৩১ বছর বয়সী লেগ স্পিনার।
আব্দুল্লাহ শাফিক, ইমাম উল হকের উদ্বোধনী জুটিতে রান তাড়ায় শুরুটা দারুণ করে পাকিস্তান। দুজন মিলে যোগ করেন ১৩৪ রান। চলতি আসরে দ্বিতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬৪ রান করেন শাফিক।
দলকে দেড়শ পার করিয়ে ইমাম আউট হন ১০ চারে ৭১ বলে ৭০ রান করে। পরে হতাশ করেন বাবর আজম। জ্যাম্পার বলে আলগা শটে নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
এরপর জুটি বাঁধেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৪৪ রান তাড়ায় জয়ের দুই নায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সাউদ শাকিল। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান নিতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, আরও একটি অবিশ্বাস্য কিছুই হয়তো করতে যাচ্ছেন তারা।
৩৫তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন প্যাট কামিন্স। ৫ চারে ৩০ রান করে ফেরেন শাকিল। ক্রিজে গিয়েই হাত খুলে মারতে শুরু করেন ইফতিখার আহমেদ। অন্য প্রান্তে রিজওয়ান খেলতে থাকেন আপন ছন্দে।
এরপরই জ্যাম্পা-ম্যাজিক! শেষ স্পেলে ফিরে ৩ ছক্কায় ২৬ রান করা ইফতিখারকে আউট করেন এই লেগ স্পিনার। পরের ওভারে তার বলে পুল করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ ৪৬ রানের ইনিংস খেলা রিজওয়ান।
নিজের শেষ ওভারে মোহাম্মদ নাওয়াজকেও আউট করে দেন জ্যাম্পা। চাপের সময়ে তিন ওভারের এই স্পেলে স্রেফ ১৫ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। পরের দুটি উইকেট নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স।
ম্যাচের প্রথমভাগে দাপট দেখান ওয়ার্নার ও মার্শ। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে এর পূর্ণ ফায়দা নেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার। সঙ্গে ছিল পাকিস্তানের বাজে ফিল্ডিং। ব্যক্তিগত ১০ রানে জীবন পেয়ে চড়াও হন ওয়ার্নার।
উদ্বোধনী জুটিতে স্রেফ ২০৩ বলে আসে ২৫৯ রান। বিশ্বকাপে প্রথম উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ জুটি এটি। সব দেশ মিলিয়ে এর চেয়ে বড় উদ্বোধনী জুটি আছে স্রেফ একটি, ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গার ২৮২ রান, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
এছাড়া বিশ্বকাপে যে কোনো উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বড় জুটি এটি। ২০১৫ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথের ২৬০ রান সবার ওপরে।
শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে মার্শের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। নিজের জন্মদিন রাঙানো শতকে মার্শ ১০ চারের সঙ্গে মারেন ৯টি ছক্কা।
দলকে তিনশ পার করিয়ে ফেরা ওয়ার্নার নিজের ইনিংস সাজান ১৪ চার ও ৯ ছক্কায়। বিশ্বকাপে ওয়ার্নারের তৃতীয় দেড়শ ছোঁয়া ইনিংস এটি। আর কোনো ব্যাটসম্যানের নেই একটির বেশি। সব মিলিয়ে সপ্তম দেড়শ ছোঁয়া ইনিংসে রোহিত শার্মার (৮) আরও কাছে গেলেন ওয়ার্নার।
ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ান এই ওপেনারের ২১তম সেঞ্চুরি এটি, বিশ্বকাপে পঞ্চম। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে সেঞ্চুরির তালিকায় স্বদেশি কিংবদন্তি রিকি পন্টিং ও শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারার পাশে বসলেন তিনি। সামনে শুধু রোহিত শার্মা (৭), সাচিন টেন্ডুলকার (৬)।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি ওয়ার্নারের টানা চতুর্থ সেঞ্চুরি! ২০১৭ সালে সিডনিতে করেছিলেন ১৩০। পরের ম্যাচে অ্যাডিলেইডে খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ১৭৯ রানের ইনিংস। ২০১৯ বিশ্বকাপে টন্টনে করেন ১০৭, তারপর এই সেঞ্চুরি। কোনো দলের বিপক্ষে টানা চার সেঞ্চুরির কীর্তি আছে শুধু ভিরাট কোহলির, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপ তো বটেই, ওয়ানডেতেই দুই ওপেনারের ১৮ ছক্কা বিশ্ব রেকর্ড। এর আগে ১৬ ছক্কার রেকর্ড ছিল ভারতের ওপেনারদের। ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই ম্যাচে রোহিত একাই মারেন ১৬টি ছক্কা।
সব মিলিয়ে ইনিংসে ১৯টি ছক্কা মারে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে তাদের সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড এটি। একই মাঠে ২০১৩ সালে ভারতের বিপক্ষেও ১৯টি ছক্কা হাঁকিয়েছিল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর আর সে অর্থে গতি পায়নি অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। শেষের ৯৮ বলে মোটে ১০৮ রান করে ৯টি উইকেট হারায় তারা। দুই ওপেনার ছাড়া আর কেউ ২৫ রানও করতে পারেনি।
এর পেছনে বড় অবদান আফ্রিদির। শেষ দিকে দারুণ বোলিংয়ে ৫ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার। বিশ্বকাপে একাধিকবার ৫ উইকেট নেওয়া পাকিস্তানের প্রথম পেসার তিনি। দেশটির হয়ে দুই বার পাঁচ উইকেটের কীর্তি আছে কেবল সাবেক লেগ স্পিনার শাহিদ আফ্রিদির।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৬৭/৯ (ওয়ার্নার ১৬৩, মার্শ ১২১, ম্যাক্সওয়েল ০, স্মিথ ৭, স্টয়নিস ২১, ইংলিস ১৩, লাবুশেন ৮, কামিন্স ৬*, স্টার্ক ২, হেইজেলউড ০, জ্যাম্পা ১; আফ্রিদি ১০-১-৫৪-৫, হাসান ৮-০-৫৭-০, ইফতিখার ৮-০-৩৭-০, রউফ ৮-০-৮৩-৩, উসামা ৯-০-৮২-১, নাওয়াজ ৭-০-৪৩-০)
পাকিস্তান: ৪৫.৩ ওভারে ৩০৫/৯ (শাফিক ৬৪, ইমাম ৭০, বাবর ১৮, রিজওয়ান ৪৬, শাকিল ৩০, ইফতিখার ২৬, নাওয়াজ ১৪, উসামা ০, আফ্রিদি ১০, হাসান ৮, রউফ ০*; স্টার্ক ৮-০-৬৫-১, হেইজেলউড ১০-১-৩৭-১, কামিন্স ৭.৩-০-৬২-২, জ্যাম্পা ১০-০-৫৩-৪, ম্যাক্সওয়েল ৫-০-৪০-০, স্টয়নিস ৫-০-৪০-২)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৬২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভিড ওয়ার্নার