আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা (রাজশাহী) : রাতে বাসার সবাই যখন ঘুমিয়ে, আমি তখন সারারাত জেগে থাকি। ভয়াবহ সেই ১৪ জানুয়ারির রাতে হাতুডি,লোহার রড, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতিসহ বিভিন্ন অস্ত্রের আঘাতের ক্ষতগুলো আমাকে ঘুমাতে দেয় না। সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা। শরীরের একাধিক ক্ষত আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এ যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা আমি ছাড়া কেউ বুঝবে না। সেই রাতের হামলায় গুরুতর আহত হয়েও এখনও বেঁচে আছি।’ কথাগুলো বলছিলেন দুর্দান্ত দাঙ্গাবাজদের হামলায় আহত আড়ানী পৌর সভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান। হামলাস্থলে যেভাবে তিনি পড়েছিলেন অনেকেই মনে করেছিলেন মারা গেছেন। তার সেই ছবিটি পরিনত হয়েছে সেই মামলার প্রতীকী ছবিতে।
বজলুর রহমানের ভাষায় বর্তমানে একরকম জীবন্মৃত হয়ে দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা বজলুর রহমানের দাবি, তার জীবনে যারা এই ঘৃণ্য ও নিশংস ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের যথোপযুক্ত শাস্তি হোক।
প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সেই রাতের বর্বরোচিত হামলার পাশাপাশি ঘটনার কথা তুলে ধরে বজলুর রহমান জানান,১৪ জানুয়ারি (ঘটনা তারিখ) রাত ৯টার দিকে ভাগিনা আরিফ হোসেনকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে নিজের বাড়িতে ফেরার সময় নুরনগর গ্রামের শুষ্কটার বাড়ি সামনে ১০/১২ জনের একটি দল তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি হাতুড়ি ও অজ্ঞাত চারজন পিস্তলসহ আক্রমণ করে। তখন তাকে মেরে ফেলার দেওয়ার হুকুম দেয় আশিক । তার হুকুমে চাপাতি দিয়ে তার বাম পায়ের হাটুর নিচে কোপ মারে সাকিল। এতে হাটুর হাড় কেটে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। সেখানে আটটি সেলাই দেওয়া লেগেছে।
সে সময় পড়ে গেলে মাথা লক্ষ্য করে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপ মারে আশিক । ডান হাত দিয়ে ঠেকানোর সময় তার ডান বাহুর উপর লেগে হাড় কেটে দ্বিখন্ডিত হয়। ডান পায়ের হাটুর নীচে চাপাতি দিয়ে কোপ মারে মানিক । তাতেও হাড় কেটে জখম হয়। তার বগলের সাইডে ড্যাগার ঢুকাইয়া দেয় শরিফ । চাপাতি দ্বারা বাম পায়ের থাই-এর নিচে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে হিমেল । সেখানে ১৫ টি সেলাই দেওয়া লেগেছে। হাফিজুলের হাতুড়ি পেটায়, পিঠে ও মাজায় কালশিরা জখম হয় । লোহার রড দ্বারা ডান পায়ের হাঁটুর উপরে আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে সজল । এভাবেই একটার পর একটা আঘাত হানতে থাকে। তখন কাঁপতে থাকি।
আত্মচিৎকারে আমার ভাগিনা আরিফ হোসেন রক্ষা করতে আগাইয়া গেলে আরিফের পেটের ডান পাশে ড্যাগার ঢুকাইয়া দেয় শরিফ। এর ফলে তার পেটের নাড়ি ভুড়ি বের হয়ে যায়। স্থানীয়রা তাদের দু’জনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। ১৪ জানুয়ারি’২১ রামেক হাসপতালে ভর্তি হয়ে সপ্তাহখানেক সেখানে চিকিৎসা নেন। বর্তমানে শহরের বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সুস্থ হতে এখানো মাস খানেক সময় লাগবে।
সেই রাতের কথা মনে হলে এখনও আঁতকে উঠেন বজলুর রহমান। তিনি বলেন,হঠাৎ করে হামলায় আমার মতো অশান্তি বয়ে এনছে আমার ভাগনের জীবনেও। ঘটনাস্থলের লোকজন উদ্ধার করে চিকিৎসা করিয়েছেন বলেই এখনও কিছুটা সুস্থ রয়েছি। বজলুর রহমানের ক্ষোভ স্থানীয় নেতাদের ওপর। কর্মহীন হয়ে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন,এতে তার দুঃখ নেই। দুঃখ হলো এখন আর কেউ খোঁজ নিতে আসেনা। কিন্তু রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
অন্যদিকে মামলা করায় এখনো তাকে হুমকি দিচ্ছে আসামীরা। এতে দুঃসহ যন্ত্রনাসহ আতঙ্কে জীবন যাপন করছি। যার প্রেক্ষিতে ৭ এপ্রিল জিডি করেছেন। (জিডি নম্বর ২৬৬) সেই জিডির সাক্ষীকেও হুমকি দিচ্ছে। তবে হুমকির কথা অস্বীকার করেছেন আশিক নামের একজন।
জানা গেছে,আড়ানি পৌরসভা নির্বাচনের দুইদিন আগে ১৪ জানুয়ারি পৌরসভার নুরনগর গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। আহত ও হামলাকারিরা পরস্পর একই এলাকার বাসিন্দা। এঘটনায় অজ্ঞাত ৪/৫জনসহ ৮জনের নাম উল্লেখ করে ২৬ জানুয়ারি রাজশাহীর ফৌজদারি আদালতে মামলা করেন বজলুর রহমানের স্ত্রী রেহেনা বেগম । বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহনের জন্য বাঘা থানাকে নির্দেশ দেন। ৬ ফেব্রুয়ারি বাঘা থানা মামলাটি রেকর্ড করেছেন। (মামলা নং-৯)।