নিজস্ব প্রতিবেদক: কোনও একক শ্রেণিতে ৪০ জনের বেশি ছাত্র ভর্তি করানো যাবে না। আর অনুমোদন ছাড়া কোনও শাখা-শ্রেণি খোলার নামে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না, শাখা-শ্রেণি খোলাও যাবে না। ২০২১ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার কয়েকটি বিধি স্পষ্টকরণ সংক্রান্ত বৈঠকে এই নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে একটি কর্মশালা করে।
গত ২৫ জুন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘হ্যাঁ বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ওয়ার্কশপ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নতুন কারিকুলামে অতিরিক্ত ছাত্র পড়ানো সম্ভব না। ’
একটি শ্রেণিতে কতজন শিক্ষার্থী থাকা উচিত জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের যে নতুন কারিকুলাম, তার কনসেপ্ট হচ্ছে—ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের মধ্যে শিখন ইন্টারঅ্যাক্টিভ হতে হবে। এটি হতে হলে শিক্ষার্থী থাকতে হবে একবারে সীমিত। একক একটি শ্রেণিতে ২০ জন শিক্ষার্থী থাকা দরকার। শিক্ষার্থী ২০, ২৫ বা ৩০ পর্যন্ত কোনোভাবে চালানো সম্ভব। কিন্তু আমাদের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষার্থীর প্রেক্ষাপটের কারণে আমরা তা পারছি না। সে কারণে যদি ৪০ জন পর্যন্ত রাখা যায় সেটা রিজনেবল। ৪০ জন শিক্ষার্থী হলে ক্লাসটা একজন শিক্ষকের পক্ষে মেইনটেন করা যায়, নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে মনিটরিং খুব বেশি জরুরি। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’-এর কয়েকটি বিধি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই জটিলতা দূর করতে মন্ত্রণালয়ের কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। তাদের প্রস্তাবে বিধিমালার বিভিন্ন বিধি স্পষ্ট করে পরিপত্রও জারি করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা আরও কিছু বিধি স্পষ্ট করতে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’-এর ৬.২ অনুচ্ছেদ স্পষ্ট করার বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়।
এই বিধি স্পষ্ট করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশনা চায়—নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কতটি শ্রেণি-শাখা খোলা যাবে? এই নির্দেশনা চাওয়ার প্রস্তাবনায় বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নির্দেশনা দেন, প্রতিটি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের একক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী থাকবে ৪০ জন। এই সংখ্যার বেশি ছাত্র ভর্তি করানো যাবে না। অনুমোদন নিয়ে শাখা-শ্রেণি খুলতে হবে। অনুমোদনের আগে ভর্তি করানো যাবে না।
জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার ৬.২ অনুচ্ছেদ স্পষ্ট করার বিষয়ে আলোচনা উঠে আসে মূল শাখা একটি এবং অতিরিক্ত শাখা-শ্রেণি দুটি। একটি শ্রেণির সর্বোচ্চ শাখা হবে তিনটি। এই প্রস্তাবনা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয় অনেক বিদ্যালয়ের আসন ফাঁকা থাকা নিয়েও। অনেক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী পায় না। আবার অনেক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভিড় করে। এই সংকট মেটাতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদ্যালয়গুলোকে আপগ্রেড করার বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে। তবে এসব বিষয়ে পরবর্তী সময়ে কর্মশালা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর জানায়, নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী একটি একক শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকতে হবে সীমিত পর্যায়ে। তা না হলে শিক্ষকরা যথাযথভাবে শেখানো কার্যক্রম পরিচালনায় সামর্থ্য হবেন না। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবেন। ছাত্র শিক্ষকের অনুপাত ঠিক রাখা জরুরি। সে কারণে ছাত্র ৪০ জনের বেশি ভর্তি করানো যাবে না।
শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা এবং একক একটি শ্রেণিতে কতজন ছাত্র থাকা সমীচীন প্রশ্নে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর এই নির্দেশনা, এই উদ্যোগটা ভালো। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মাঠের বাস্তবতা বিবেচনা করা খুব প্রয়োজন। কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশনা মানতে পারবে, মনিটরিং কে করবে? অসংখ্য নির্দেশনা ভালো উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায় না। এটি কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে, মনিটরিং করা যাবে, এই প্রশ্নটা থেকেই যায়। শিক্ষানীতিতে রয়েছে একটি শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৩৫ জন শিক্ষার্থী থাকবে। আমরা সেটি বাস্তবায়ন করতে পারিনি।’