নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব অনেক বেশি বলে মনে করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি আমরা একটি মানসম্পন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে পরিকল্পনা করেছেন, সেখানে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে। না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা সক্ষম হবো না, সক্ষম হবো না সরকারের রূপকল্প ২০৪১ অর্জন করতে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে এদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের দায়িত্বের জায়গাটি অনেক বেশি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটির অভিষেক, নবীন কর্মকর্তাদের বরণ, অবসরপ্রাপ্তদের বিদায়ী সংবর্ধনা ও প্রীতিসম্মিলনী-২০২১’ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কিছুর অপ্রতুলতা ও অভাব রয়েছে। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা তাদের সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি আমাকে গভীরভাবে আনন্দিত করে। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সবসময় একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিই, আর তা হলো তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে তোলা। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও অনেক পছন্দ করেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করা নতুন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা নতুন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন, তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় দায়িত্বগুলো গ্রহণ করতে হবে।’
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, রেজিস্টার প্রবীর কুমার সরকার এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদ।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামীর জন্যে প্রস্তুত করতে হলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে ভূমিকা রাখতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত পরিবর্তনের জন্য কর্মকর্তাদের কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাদের আরও দক্ষতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’
এ. কে. আজাদ বলেন, ‘এদেশের গরীব কৃষকদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখনও এই বিশ্ববিদ্যালয় সেই কাজ করে যাচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না যায় সেজন্য ১৭০০ শিক্ষার্থীকে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন স্নাতক পর্যন্ত মাসিক ২৫০০ টাকা করে বৃত্তি দিচ্ছে। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আরও বাড়বে। এছাড়া আগামী ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য অ্যালামনাইয়ের শতবর্ষের মিলনমেলায় একটি ফান্ড গঠন করা হবে।’
এ সময় তিনি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বৃত্তি প্রদানের জন্য দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের নেওয়া সাক্ষাৎকারের কিছু মর্মস্পর্শী ঘটনা উল্লেখ করেন। এ. কে. আজাদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা রোকেয়া ও শামসুন নাহার হলে কোনো খালি জায়গা থাকলে সেখানে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য ভবন করে দেবো। পূর্বাচলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য ভবন করে দেবো।’ এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ করা হয়। পরে অতিথিদের ফুল, ব্যাজ ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে নতুন কমিটিকে শপথবাক্য করান উপাচার্য আখতারুজ্জামান।
এছাড়া সেখানে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেওয়া নবীন কর্মকর্তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়াসহ বিদায়ী কর্মকর্তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শেষে র্যাফেল এবং নৈশভোজের মাধ্যমে আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।