ঈদের পরে টানা কর্মসূচি আওয়ামী লীগের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির নির্দলীয় সরকারের রূপরেখাকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে রাজপথসহ সারা দেশের মাঠ দখলে রাখার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আসন্ন কোরবানির ঈদের পর থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা কর্মসূচি পালন করবে দলটি। রাজধানী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত শান্তি সমাবেশ, জনসভা, হাটসভা ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে একদিকে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা হবে, অন্যদিকে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখবেন। দেশে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটতে দেবেন না তারা। কেউ যেন দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার ও গুজবের জবাব দেওয়া, সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের অতীতের আগুন সন্ত্রাসের কর্মসূচিও জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক মাঠে সরব উপস্থিতি থাকবে আওয়ামী লীগের।

এদিকে ঈদুল আজহার পর দুদিনের সফরে গোপালগঞ্জে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র জানায়, আগামী ১ জুলাই সড়কপথে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জ যাবেন। ২ জুলাই ঢাকায় ফিরবেন। এ সফরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনি এলাকা টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত এলাকার বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন। চলতি বছরে একাধিকবার তিনি টুঙ্গিপাড়ায় সফরে গেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সবশেষ ঈদ। পবিত্র ঈদুল আজহাকে কাজে লাগানোর জন্য হাইকমান্ডের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে তৃণমূলে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আটটি সাংগঠনিক টিম। নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ভোটারদের কাছে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাত জন নেতা জানান, দলের নেতাকর্মী, সংসদ সদস্য ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে গণসংযোগ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংকটের কথা মাথায় রেখে নেতাকর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা আরো বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এমনটা ধরে নিয়েই রোডম্যাপ তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে চলছে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ। কী কী থাকবে ইশতেহারে সেগুলো সংযোজন-বিয়োজনের কাজ চলছে। তৃণমূলে চলছে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন। মূলত ইউনিট কমিটিই হলো ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি। মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জেলা-উপজেলার নেতাদের গণভবনে ডেকে কথা বলছেন। তাদের মতামত নিচ্ছেন। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে তাগিদ দিচ্ছেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে। বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে চলছে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে কাজ। দলীয় সভানেত্রীর নিজস্ব লোক এবং কয়েকটি সংস্থা নিয়মিত জরিপ করছেন। এ জরিপে বর্তমান সংসদে থাকা এমপিদের কারো কারো জনপ্রিয়তা ওঠানামা করছে। কারো কারো ক্রমান্বয়ে কমতির দিকেই যাচ্ছে। ক্লিন ইমেজ ও অধিকতর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে বাছাই করে রাখা হচ্ছে। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠে কাজে লাগাতে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা করা হচ্ছে। উন্নয়ন মেলা, পথসভা অব্যাহত রাখা হবে। সব মিলে নির্বাচনি আমেজে পুরোদমে কাজ চলবে কোরবানির ঈদের পর থেকে।

দলীয় সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা-নীতি, দ্রব্যমূল্য, লোডশেডিং, বিরোধী দলের টানা কর্মসূচি ঘোষণা, কূটনীতিক চাপ ও নানা ধরনের রাজনৈতিক অপপ্রচার ও গুজব সৃষ্টি হয়েছে। এতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাই কোরবানি ঈদের পরই টানা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রচার-প্রচারণা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো জনগণের সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে তা নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের উন্নয়ন প্রচারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ব্যবহার করা হবে, তেমনি সহযোগী সংগঠনের নেতারাও ক্ষেত্রবিশেষ নিজ সংগঠনের ব্যানারে উন্নয়ন প্রচার করবেন। কৃষিক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাড়ে ১৪ বছরের সাফল্য তুলে ধরে কৃষক লীগ হাটসভা করছে। কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২ কোটি বুকলেট ছাপিয়ে তারা হাটসভা করছেন। এতে কৃষিক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন এবং বিএনপি-জামায়াতের আমলে কী ছিল সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। একইভাবে যুবকদের জন্য সরকার কী করেছে, সেগুলো প্রচার করবে যুবলীগ। শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমান সরকারের গৃহীত কর্মকাণ্ড তুলে ধরবে ছাত্রলীগ। সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় দেশের ৫ কোটি মানুষের সুফলগুলো স্বেচ্ছাসেবক লীগ তুলে ধরবে। খাতভিত্তিক উন্নয়নের চিত্র পোস্টার, বিলবোর্ড, ডিজিটাল ডিসপ্লে করে সারা দেশে পৌঁছানো হবে। পাশাপাশি থাকবে বিএনপি-জামায়াতের আমলের সঙ্গে তুলনামূলক চিত্রও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রেডিও-টিভিতেও বিজ্ঞাপন আকারে দেখানো হবে।

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে সরকার ও দলের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এসবের সঙ্গে প্রশাসনকেও জড়ানো হচ্ছে। এতে দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করতে চায় অপপ্রচারকারীরা। প্রথমত তারা সংঘবদ্ধ শক্তি হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে দিতে চায়, দ্বিতীয়ত প্রশাসনকে আওয়ামী লীগের মুখোমুখি করতে চায়। অতীতেও নির্বাচনের আগে তারা একই ধরনের তত্পরতা চালিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেনি। এবারও সফল হবে না। তিনি বলেন, ঈদের পরে রাজধানী থেকে শুরু করে মহানগর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কর্মসূচি বিস্তৃত করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে আওয়ামী লীগের কোনো শাখার সম্মেলন হবে না। তবে যেসব স্থানে পূর্বেই তারিখ চূড়ান্ত ছিল শুধুমাত্র সেই শাখাগুলোর সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন থানা-ওয়ার্ডের কমিটিও নির্বাচনের পরে হতে পারে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title