মোঃ মিজানুর রহমান : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ আরও শক্তি সঞ্চয় করে ধীরে ধীরে সুপার সাইক্লোনে রূপ নিচ্ছে। পিরোজপুর জেলায় দেওয়া হয়েছে ০৭ নম্বর বিপদ সংকেত। এছাড়া অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তদসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’আম্ফান’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ (১৮ মে ২০২০) বিকাল ০৩ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৭৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০১৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৭০ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ১৯ মে ২০২০ শেষরাত হতে ২০ মে ২০২০ বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিঃ মিঃ এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২১০ কিঃ মিঃ যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিঃ মিঃ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৭ (সাত) নম্বর পুনঃ ০৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৭ নম্বর বিপদ সংকেত (পুনঃ) ০৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
জেলা দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মোজাহারুল ইসলাম জানান, জেলার ৭ উপজেলায় ৩০০টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানীয়দের আশ্রয় নেওয়ার পর অতিরিক্ত প্রয়োজন হলে আরো ২৫৭টি বেসরকারি আশ্রয় কেন্দ্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সরকারি ৩০০টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে জেলার নাজিরপুরে ৪১টি, ইন্দুরকানীতে ১৯, মঠবাড়িয়ায় ৬১, কাউখালীতে ১১, ভান্ডারিয়ায় ৫৩, নেছারাবাদে ২৯, পিরোজপুর সদরে ৮৬টি আশ্রয় কেন্দ্র সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রয়োজন অনুযায়ী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ভবন আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তিনি আরো জানান, এ জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আলোচনার মাধ্যমে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, জেলার ৭ উপজেলায় ৫৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ সব আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থাকার জন্য উপযুক্ত করার কাজ চলছে। সেখানে যথাযথবাবে বিদ্যুৎ সংযোগ, পানির ব্যবস্থা ও পয়: নিষ্কাসনসহ আশ্রয় কেন্দ্রে থাকাদের জন্য খাবার ক্রয়ের কাজ চলছে।জেলা পুলিশ সুপার মো. হায়াতুল ইসলাম খান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য জেলার প্রতি থানার ওসিদের স্থানীয়দের নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহযোগিতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে পরবর্তীতে পুলিশের উদ্যোগে সচেতনতামূলক মাকিং এর ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়াদের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য পুলিশকে পাহারার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।