আদালত অবমাননার অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তলব হাইকোর্টে

নিজ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আদালতের আদেশ পালন না করায় আদালত অবমাননার অভিযোগে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের একজন পরিচালককেও আদালতে তলব করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে তলবের লিখিত আদেশ প্রকাশ করা হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর এই আদেশ লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়।

লিখিত আদেশে হাইকোর্ট আগামী ১৬ মার্চ সকাল ১১ টায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসানকে আদালতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

লিখিত আদেশে বলা হয়, গত ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পিটিশনারদের চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রফেসর মুহাম্মাদ ইউনূস ও মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান সেই আদেশ অনুসরণ করেননি। তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার প্রাথমিক সত্যতা পরিলক্ষিত হওয়ায় আদালত অবমাননার রুল জারি হয়েছে।

রুলে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে সেই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তলব করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। তাকে আগামী ১৬ মার্চ ভার্চুয়ালি হাজির হয়ে আদালত অবমাননার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির ৩৮ জন কর্মচারীকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করায় গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামানের করা আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে ওই দিন শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী। তার সঙ্গে ছিলেন আবেদনকারী আইনজীবী মো. উজ্জ্বল হোসেন। অন্যদিকে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী জানান, শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে গত বছরের ২৫ অক্টোবর মো. কামরুজ্জামানসহ গ্রামীণ টেলিকমের ৯৯ জন কর্মচারীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে এই ছাঁটাই করা হয়েছে।

এ নিয়ে হাইকোর্টে ৩৮টি রিট আবেদন করা হয়। এসব রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত বছর ৬ ডিসেম্বর এক আদেশে তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তাদের চাকরি থেকে অপসারণের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। এই আদেশের পরও তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল না করায় হাইকোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন করেন মো. কামরুজ্জামান।

সেটি শুনানি নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসানকে তলব করা হয়েছে। আগামী ১৬ মার্চ তাদের ভার্চুয়ালি হাজির হয়ে চাকরিচ্যুত ৩৮ জনকে পুনর্বহাল না করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার রুল জারি করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি হয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ যেহেতু ভার্চুয়ালি চলছে তাই তাদেরকে ভার্চুয়ালি হাজির হতে হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title