আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। একাত্তরের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। এর পর বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী।। সর্বত্র চলতে থাকে ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ। এমনই প্রেক্ষাপটে পর দিন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয় পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার লড়াই। এ লক্ষ্যে ১০ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়। কারণ এই সরকার গঠনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় গণপরিষদ।
নবগঠিত সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে অনুমোদন করে। ঘোষণায় বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি থাকবেন।
সরকারের তথা দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভাষণ দেন। যে ভাষণ বঞ্চিত ও শোষিত বাঙালিকে আরো সাহস জোগায় ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করে। এর পর থেকে প্রতিদিনই সংগ্রামী মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তীব্র গতি পায় মুক্তির আন্দোলন। লাভ করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি।
নবগঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের নামও ঘোষণা করেন। তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো এক স্থানে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এর পর ১৩ এপ্রিল ৬ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা এবং তাদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করা হয়। পরের দিন ১৪ এপ্রিল কর্নেল এমএজি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এর পরের দিনটা বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
সরকার গঠনের পর যেহেতু শপথ গ্রহণের বিষয় রয়েছে, তাই ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী বৈদ্যনাথ তলার এক বিশাল আম্রকাননে অতি গোপনীয়তার সঙ্গে নবগঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী এই মুজিবনগর সরকারের দিক-নির্দশনা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মুক্তির সংগ্রাম প্রতিদিন নতুন গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ নামে আরেকটি স্বাধীন ভূখণ্ড।
করোনাভাইরাসের কারণে দেশে সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে কারণে এ বছর দিবসটি উদযাপনে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ শেখ হাসিনাও সম্প্রতি মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার সময় মুজিবনগর দিবসে যাতে কোনো জনসমাগম না হয় সে নির্দেশনা দেন। একেবারে স্বল্প পরিসরে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঘরে বসেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালনের নির্দেশনা দেন।
শুধু মুজিবনগর দিবসই নয়, করোনাভাইরাসের কারণে এবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা তথা জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানাদি বাতিল করা হয়।