অনলাইন ডেস্ক: কাতারের রাজধানী দোহার আল খোরের আল বায়েত স্টেডিয়ামে শেষ আটের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড। কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ম্যাচ দেখতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্ব। কোয়ার্টার ফাইনাল মহারণের এই ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়।
দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স বিশ্বকাপের বর্তমান শিরোপাধারী। অন্যদিকে ১৯৬৬ সালে একবার বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছিল ইংল্যান্ড। বর্তমান ও সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মধ্যকার এ মহারণে নির্ধারিত হবে কোন দলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন টিকে থাকছে। দুই দলই বিশ্বকাপের হট ফেভারিট। আজ অবধারিতভাবেই বিদায় নিতে হবে এই দুই ফেভারিটের যেকোনো একটিকে।
এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত হারের মুখ দেখেনি ইংল্যান্ড। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ইরানকে ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত করে উড়ন্ত সূচনা করে দলটি। এরপর অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গোলশূন্য ড্র করেছিল থ্রি লায়ন্সরা। তবে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ওয়েলসকে ৩-০ গোলে হারিয়েই শেষ ষোল নিশ্চিত করে তারা। রাউন্ড অফ সিক্সটিনের ম্যাচে সেনেগালকেও ৩-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ইংল্যান্ড।
বিপরীতে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে। এরপর ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়ে নিশ্চিত করে শেষ ষোল। তবে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে তিউনিসিয়ার কাছে ১-০তে হেরে বসে লে ব্লুজরা। সেই ম্যাচে মূল একাদশ না খেলিয়ে দলের রিজার্ভ বেঞ্চের অনেকে খেলায় ফলাফল তাদের পক্ষে যায়নি। রাউন্ড অফ সিক্সটিনের ম্যাচে পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ফরাসিরা।
ইংল্যান্ডের আক্রমণভাগে এবারো রয়েছেন গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হ্যারি কেইন। তিনি দলটির অধিনায়কও বটে। ইংল্যান্ডের জার্সিতে ৫২টি গোল করেছেন হ্যারি কেইন। এই তালিকায় তার ওপরে আছেন কেবল ওয়েইন রুনি (৫৩)। আর একটি গোল করলেই তাকে ছাড়িয়ে যাবেন হ্যারি কেইন।
কাতার বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত যৌথ সর্বোচ্চ গোল ইংল্যান্ডের, থ্রি লায়ন্সরা চার ম্যাচে গোল করেছে ১২টি। শেষ তিন ম্যাচে কোনো গোল হজম করেনি গ্যারেথ সাউথগেটের দল।
বিপরীতে প্রতি ম্যাচেই গোল হজম করেছে ফ্রান্স, চার ম্যাচে চার গোল খেয়েছে দলটি। তবে ক্লিনশিট রাখতে না পারলেও, ফরাসিদের আক্রমণভাগে আছে কিলিয়ান এম্বাপ্পে, চার ম্যাচে যিনি একাই নামের পাশে লিখিয়ে নিয়েছেন পাঁচ গোল। ২০১৮ সালে এম্বাপ্পে চারটি গোল করেছিলেন। ইতোমধ্যেই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। দারুণ ছন্দে আছেন এই ফরাসি স্ট্রাইকার।
বিশ্বকাপে এর আগে দুবার দেখা হয়েছে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের। ১৯৬৬ ও ১৯৮২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিল ফ্রান্স। দুইবারই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ইংলিশরা। ১৯৬৬ সালে গ্রুপ পর্বে ফরাসিদের তারা হারিয়েছিল ২-০ গোলে। ১৯৮২ আসরে তারা ৩-১ গোলের ব্যবধানে জয় পেয়েছিল।
সার্বিক পরিসংখ্যানের দিক থেকেও এগিয়ে আছে ইংলিশরা। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স এখন পর্যন্ত ৩১ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে ১৭ ম্যাচ জিতেছে ইংল্যান্ড। ফ্রান্স জিতেছে মাত্র ৯টি ম্যাচ। তবে ইংল্যান্ডের ১০ জয়ই ১৯৫০ সালের আগে। তাই সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় দুইদলই সমানে সমান।
২০০৬ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল ফ্রান্স যারা কিনা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলছে। ২০০৬ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দল ইতালি ২০১০ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে। আবার ওই আসরের চ্যাম্পিয়ন স্পেন ২০১৪ সালে বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকে। ২০১৪ আসরের শিরোপা জয়ী জার্মানিরও গত আসরে বিদায় ঘটে গ্রুপ পর্বে।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপ পর্বে বাদ পড়াটাকে অনেকেই চ্যাম্পিয়নস কার্স বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। সেই চ্যাম্পিয়নস কার্স কাটিয়ে ফেলেছে ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বের বাধা টপকে দলটি খেলছে কোয়ার্টার ফাইনালে। এবারে কতদূর যেতে পারে দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা, সেটি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে গোটা বিশ্ব।