অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে গোপনে কোরআন শরীফ রেখে অছিলা তৈরি করে কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের ওপর হামলা, মন্দিরে হামলা, ঘর-বাড়িতে হামলা-আগুন লাগানো-লুটপাট-নির্যাতন-হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর জাসদের উদ্যোগে আজ সোমবার সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জিপিওর সামনে জাসদ কার্যালয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ভাষণদানকালে হাসানুল হক ইনু এ বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, কোনো হিন্দু পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ রেখে নিজেদের ধর্মের অধর্ম করবে না। পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ রাখা হিন্দুদের ওপর হামলার অছিলা তৈরির একটি সাজানো ও সুপরিকল্পিত ঘটনা। হাসানুল হক ইনু বলেন, হিন্দুদের ওপর হামলার অছিলা তৈরির জন্য যারা মণ্ডপে কোরআন শরীফ রেখেছিল তারাই কোরআন শরীফের অবমাননা করেছে। কোরআন শরীফকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার, কোরআন শরীফকে হিন্দুদের ওপর হামলার অছিলা হিসেবে ব্যবহার করাই কোরআন শরীফের সবচেয়ে বড় অবমাননা। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামান্যতম শৈথিল্য না দেখিয়ে কাঠোর হস্তে হিন্দুদের ওপর হামলাকারীদের দমন করতে হবে। যেকোনো মূল্যে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
ইনু বলেন, যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি-শান্তি সহ্য করছে না তারাই সুপরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অশান্তি তৈরির জন্য হিন্দুদের ওপর হামলা করে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর অপচেষ্টা করছে। তারাই আগুন লাগাচ্ছে, তারাই অতীতে আগুনসন্ত্রাস করেছে, তারাই আগুনযুদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা করতে দেওয়া হবে না।
ইনু বলেন, হিন্দুদের নিরাপত্তা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষা ও অসাম্প্রদায়িকতা বজায় রাখার প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস-দরকষাকষি চলবে না।
তিনি বলেন, ধর্মান্ধ মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীগোষ্ঠী ও তাদের রাজনৈতিক পার্টনাররা বাংলাদেশকে তলেবানি রাষ্ট্র বানানোর যতই দিবাস্বপ্ন দেখুক না কেন, বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর রাজনীতি প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রশাসনের ওপর ছেড়ে না দিয়ে, হাতগুটিয়ে বসে না থেকে, অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক-সামাজিক কর্মী ও শান্তিপ্রিয় জনগণকে মাঠে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি জাসদের নেতাকর্মীদের ১৪ দলসহ সব অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তিকে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
গুজব রটিয়ে বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের পুজামণ্ডপ, মন্দির, ঘরবাড়িতে হামলা ও হত্যা এবং রাজনৈতিক অশান্তি-অস্থিতিশীলতা-সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পাঁয়তারার প্রতিবাদে জাসদ ঘোষিত দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে
ঢাকা মহানগর জাসদের সমন্বয়ক মীর হোসাইন আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোহসীন, রোকনুজ্জামান রোকন, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মহিবুর রহমান মিহির, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (হা-ন) সভাপতি আহসান হাবীব শামীম প্রমুখ।
মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে জাসদের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকার সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় জাসদের পক্ষ থেকে মানববন্ধন-সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।