নাগরপুর প্রতিনিধি: ৯ ডিসেম্বর নাগরপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে হটিয়ে অবরুদ্ধ নাগরপুরকে হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত করে।
১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণকারী মুক্তিবাহিনীর কর্তৃত্বের বদলতে বেশ কয়েকটি বাহিনী গড়ে উঠে। এর মধ্যে কাদেরীয়া বাহিনী, বাতেন বাহিনী, ফরিদপুরের হেমায়েত বাহিনী, সিরাজগঞ্জের লতিফ মির্জা বাহিনী, পিরোজপুরের রফিক বাহিনী উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের ভিতরে ভারত বা প্রবাসী সরকারের সাহায্য ছাড়াই এসকল বাহিনী গড়ে উঠে ও দেশের নানা জায়গায় দুর্ধর্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
কাদেরীয়া বাহিনী ৩ এপ্রিল এবং বাতেন বাহিনী মে মাসের প্রথম থেকে টাংগাইল সহ দেশের বিস্তির্ণ এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সারা দেশের ন্যায় হানাদারদের দ্বারা ক্ষতবিক্ষত হয় টাংগাইল শহরের সর্বদক্ষিণে ধলেশ্বরী নদী দ্বারা বিছিন্ন নাগরপুর। নাগরপুরকে শত্রæ মুক্ত করতে বাতেন বাহিনী কাদেরীয়া বাহিনী বেশ কয়েক বার আক্রমন করেও চুড়ান্ত সফলতা আনতে পারেনি। ২৯ নভেম্বর কেদারপুর নামক স্থানে হাজার মুক্তিযোদ্ধা নাগরপুর আক্রমনের উদ্দেশ্যে সমেবত হয়। সংবাদ পেয়ে হানাদারদের ২টি যুদ্ধ বিমান থেকে বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। ফলে মুক্তিযুদ্ধারা বিছিন্ন হয়ে পড়ে। অন্যদিন ১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা বাছাই করে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে নাগরপুর থানা আক্রমনের পরিকল্পনা করেন। ৩০ নভেম্বর আনুমানিক ১২ টায় উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে আক্রমন রচনা করা হয়। উপযপরি গোলাগুলিতে গোটা থানা ধূলিময় হয়ে উঠে। এ সুযোগে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রæদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। ১০ মিনিটের মধ্যেই নাগরপুর বাজার শত্রু মুক্ত হয়। টাংগাইলের মধ্যে নাগরপুরের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা বেশী রসদ ব্যবহার করে। এ যুদ্ধে ২টি ৩ ইি মর্টার, ২০ টি ২ ইি মর্টার, ২টি রকেট লান্সার, ২৫ টি গ্রেনেট থ্রেয়িং রাইফেল, ৫টি এসএমজি, ৪০টি এমএমজি এবং কয়েকশত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহৃত হয়। এ যুদ্ধে ৬ জন শত্রু সেনা নিহত হয়। এ যুদ্ধে আংশিক আহত হন কাদের সিদ্দিকী । ১ ডিসেম্বর বাতেন বাহিনী হানাদারদের উপর পুন: এক অভিযান পরিচালনা করেন, এতে নেতৃত্ব দেন সুবেদার মেজর আবু তাহের ও সুবেদার আব্দুল বারী কিন্তু স্থায়ী ভাবে দখল সম্ভব হয় না। দিন যত যায় স্বাধীনতা কামিদের যুদ্ধ ততই তীব্র হয়। অবশেষে কাদেরীয়া বাহিনীর কোম্পানী কমান্ডার হুমায়ুন বাঙ্গাল, রবিউল আলম, মকবুল হোসেন, জয়নুল আবেদীন, সাইদুর রহমান, ফজলুল হক, সবুর খান, মস্তফা, লাবিবুর, গোলাম সরোয়ার ও আলী হোসেন এবং বাতেন বাহিনীর কয়েকটি কোম্পানীর যৌথ আক্রমনে হানাদার বাহিনীর সদস্যগন কয়েকটি লাশ ও প্রায় প াশজন আহত সেনা-সহ পালাতে বাধ্য হয়।
শত বেদনায়ও নাগরপুর বাসী ৯ মাসের দুঃখ মুহুর্তের মধ্যে ভুলে আনন্দ আর উল্লাসে “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মূখরিত করে তুলে।
নাগরপুরের বিভিন্ন যুদ্ধে রংঙ্গা হালদার, ভবতোষ সাহা, অনীল সাহা, কালি শংকর, সত্যব্রত, চিন্তা মালি, মুধুসুধন, রঞ্জিত কুমার, মনোরঞ্জন, মদন সরকার, নেপাল দাস, মোশারফ রতন, লতিফ খা ও হাবিব সহ অনেকেই হানাদারদের হাতে নিহত হয়।