হাওর, বিল ও চর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে হাওর, বিল ও চর এবং পাহাড়ি এলাকাকে আওতাভুক্ত করতে বলেছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেসরকারি মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেটওয়ার্ক কাভারেজ কম থাকায় রাষ্ট্রীয় সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাভারেজের আওতা বাড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গতকাল শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মোট চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন একটি ও তিনটি সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
সভায় ৬৯৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় জানানো হয়েছে, সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত সাবমেরিন ক্যাবলটি ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূমধ্য সাগর অবধি বিস্তৃত হবে। ক্যাবলটির কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিশর ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশের ব্রাঞ্চটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারে ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
এর আগে দেশে আরো দুটি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়। সভায় জানানো হয়েছে, প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল এসএমডব্লিউ-৪-এর ২০ বছরের আয়ুষ্কাল আগামী ২০২৫ সালে শেষ হবে। ইতিমধ্যে এই কেবল ১৫ বছরের পুরোনো হয়ে যাওয়ায় সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাছাড়া তুলনামূলকভাবে পুরোনো প্রযুক্তির কারণে এই ক্যাবলের মাধ্যমে যথেষ্ট দ্রুতগতির সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এসব বিষয় বিবেচনা করেই বাংলাদেশকে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)।
একনেক সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ড. শামসুল আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পকে সময়োপযোগী উল্লেখ করেছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ভুটানে ব্যান্ডউইথ রপ্তানির চুক্তি হয়েছে। তাছাড়া সৌদি আরবও বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ ক্রয়ে আগ্রহী। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ৩৯২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে জোগান দেওয়া হবে। বাকি ৩০০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কোম্পানি বিএসসিসিএল। চলতি বছরের অক্টোবরে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
সভায় ৯০৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে নরসিংদী জেলার অন্তর্ভুক্ত আড়িয়াল খাঁ নদ, হাড়িদোয়া নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ, পাহাড়িয়া নদী, মেঘনা শাখা নদী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র শাখা নদ পুনঃখনন প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে ৩০৪ কোটি টাকা।
ড. শামসুল আলম জানান, রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে রেট শিডিউল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য খেয়াল-খুশিমতো রেট শিডিউল পরিবর্তন করা যাবে না। স্থানীয় সরকারের বরাদ্দ যথযথ ব্যয় হচ্ছে কি না, তা তদারকিরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় ৩ হাজার ৩১৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল সংযোগের জন্য ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে ৭৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটিতে চীন সরকার থেকে ১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া সভায় ২ হাজার ৭৪৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মিউনিসিপ্যাল গভরন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস’ শীর্ষক প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রথম সংশোধনী থেকে ব্যয় বেড়েছে ২৭৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে সভায় জানানো হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় টেকনাফ ও কক্সবাজারের দুটি পৌরসভাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গাদের জন্য অতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণ পাওয়া গেছে। এজন্য প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া ও টেকনাফ পৌরসভার জরাজীর্ণ নগর অবকাঠামোর পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে।