নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিদিন গড়ে ৪২৯ জন সম্পৃক্ত হচ্ছেন সর্বজনীন পেনশন স্কিমে। উদ্বোধনের দিন থেকে রোববার পর্যন্ত এক মাসে এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিবন্ধন চূড়ান্ত করেছেন ১২ হাজার ৮৯২ জন। প্রথম মাসের এই সংখ্যাকে ধীরগতি মনে করছে না কর্তৃপক্ষ। তবে মাঠপর্যায়ের জনগণের কাছে এ স্কিম পৌঁছানোকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা হচ্ছে। এ জন্য গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে এ স্কিম তুলে ধরতে ডিসি ও ইউএনওদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এ স্কিম নিয়ে যাতে অপপ্রচার না হয় সেদিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের যুক্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব মিশন প্রধানকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা রোববার যুগান্তরকে বলেন, এই স্কিম নিয়ে রুট লেভেল পর্যন্ত মানুষের কাছে সেভাবে পৌঁছতে পারিনি। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ায় এ পরিমাণ নিবন্ধন হয়েছে। এক মাসে প্রত্যাশা অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক মাসের তথ্য দিয়ে এটি মূল্যায়ন করা যাবে না। হয়তো বছরপূর্তিতে বোঝা যাবে । এখন পর্যন্ত কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, টার্গেট জনগণের কাছে পৌঁছানো। যখন প্রত্যেকের কাছে পৌঁছাতে পারব তখন মনে হবে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। সরকার পেনশনের অর্থ গ্যারান্টি দিচ্ছে। একটি আইনের আওতায় করা হয়েছে। এটি রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি। ফলে এটি নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা থাকবে না।
সূত্র জানায়, সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে আরও অধিক জনপ্রিয় করতে সম্প্রতি দুটি বৈঠক হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে। প্রথম বৈঠক হয় ডিসি ও ইউএনওদের সঙ্গে। সেখানে সর্বজনীন পেনশনের সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে বলা হয়। এছাড়া এ স্কিমের অর্থের গ্যারান্টি রাষ্ট্র, আগামীতে এ স্কিমে অন্তর্ভুক্তি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে বলা হয়। পেনশন স্কিম নিয়ে কোনো ধরনের অপপ্রচার না হয় সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। কারণ মাঠপর্যায়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে সাধারণ মানুষকে এক শ্রেণির মানুষ মিথ্যা ও ভুল বোঝাচ্ছে তা সরকারের নজরে আসার পর এ নিয়ে সতর্ক করা হয় ডিসি ও ইউএনওদের। ওই বৈঠকে ডিসিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইতোমধ্যে সাধারণ জনগণকে নিয়ে বিভিন্ন জেলায় এ ব্যাপারে বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্টরা। পেনশন স্কিমকে আরও জনপ্রিয় করতে এটি অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।
এদিকে দ্বিতীয় বৈঠক হয় বিদেশে অবস্থানরত সব মিশনকে নিয়ে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, যে চারটি পেনশন স্কিম আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কম যুক্ত হচ্ছেন প্রবাসী স্কিমে। শুধু প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’ নামে পৃথক একটি স্কিম আছে। সাড়া কম পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ ডলারের পেনশনের চাঁদা পরিশোধের ক্ষেত্রে টাকার অবমূল্যায়ন, রেমিট্যান্সের মতো ডলারের বিপরীতে পেনশনে প্রণোদনা মিলবে কিনা। ওই বৈঠকে জানানো হয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাস’ নামে যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে, তাতে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পেনশনের চাঁদার বিপরীতে (প্রতি ডলারে) ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তবে এই প্রণোদনার অর্থ পেনশন হিসাবে জমা হবে না। তা জমা হবে চাঁদাদাতার ব্যাংক হিসাবে। সেখান থেকে প্রণোদনার অর্থ তুলতে পারবেন। এ বিষয়টি তুলে ধরতে মিশন প্রধানগুলোকে ওই বৈঠক থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মাঠপর্যায়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, পেনশন স্কিম নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা পাওয়ার বিষয়ে এখনও নেতিবাচক মনোভাবই আছেই। বিশেষ করে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের টাকা নিয়ে হয়রানির নজির কম নয়। নতুন পেনশন স্কিমে সেই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি হয় কিনা, সেই চিন্তায় আছেন অনেকে। অতীতে সরকারি বা আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিলের অর্থ অব্যবস্থাপনার নজির রয়েছে।
সূত্রমতে, ১৭ আগস্ট সবার জন্য পেনশন অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসে মোট পেনশন নিবন্ধন চূড়ান্ত করেছেন ১২ হাজার ৮৯২ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন করেছেন ‘প্রগতি’ স্কিমে। এখানে বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এ স্কিমে মোট অর্থ জমা পড়েছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ‘সুরক্ষা’ স্কিম’। এখানে নিবন্ধন করেছেন চার হাজার ৯৬৪ জন। বিপরীতে অর্থ জমা পড়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে আছে ‘সমতা’ স্কিম। এ পর্যন্ত এক হাজার ৩২১ জন বিবন্ধন করেছে। বিপরীতে অর্থ জমা পড়েছে ২১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। তবে সবচেয়ে কম সাড়া পড়েছে ‘প্রবাসী’ স্কিমে। এখানে এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৩৯৩ জন। বিপরীতে অর্থ জমা পড়েছে ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগ প্রাথমিক একটি হিসাব করেছে। সেখানে দেখা গেছে, প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ মানুষ চারটি স্কিমে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের চাঁদার পরিমাণ গড়ে ৫ হাজার টাকা হয়, সেক্ষেত্রে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার তহবিল তৈরি হবে। যদি অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা এক কোটি হয়, এ ক্ষেত্রে তহবিলের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। ফলে এই স্কিমটি পুরোপুরি চালু হলে সরকারের টাকার সংকট থাকবে না। এর বিপরীতে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, সরকার পেনশনের তহবিল আয় হবে এমন উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার চিন্তাভাবনা করছে। তবে যারা পেনশন সুবিধাভোগীর টাকা বিনিয়োগ করবেন, তাদের স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।