শেরপুর জেলা প্রতিনিধি: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সময়কার নানা স্মৃতি ও অবদান এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সংস্কৃতি ও ঐত্যিবহনকারী গল্প নিয়ে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘ক্ষৃদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ নামে জাদুঘরের উদ্বোধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বিকাল পাঁচটার দিকে উপজেলার গজনী অবকাশ পর্যটনকেন্দ্রে এ জাদুঘরের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব। গজনী অবকাশ পর্যটনকেন্দ্রের ওয়াচ টাওয়ারের সামনে এ জাদুঘরের অবস্থান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক এটিএম জিয়াউল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তোফায়েল আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুক্তাদিরুল আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফরিদা ইয়াসমিন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমাণ্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম হিরু, ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম, ইউএনও রুবেল মাহমুদ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।
জাদুঘরটি দুই ভাগে বিভক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘ক্ষৃদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত জাদুঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্লভ কিছু ছবি। রেসকোর্সের ৭ই মার্চের ভাষণসহ বঙ্গবন্ধুর নানা সময়কার ছবি কাচের ফ্রেমবন্দি, রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, মানচিত্র, ভাষা আন্দোলনে শহীদদের ছবি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠদের ছবিসহ মুক্তিযুদ্ধ সময়কার শেরপুর জেলায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন স্থানের স্মৃতিবিজড়িত ছবি। প্রত্যেকটি ছবির নিচে রয়েছে প্রেক্ষাপটের কথা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা সম্বলিত বিভিন্ন ধরণের বইসহ রয়েছে ‘বুক সেলফ’। আরও আছে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা। এছাড়া বিশেষ শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মাচের ভাষণসহ দেশাত্মবোধক গান প্রচারের ব্যবস্থা রয়েছে এ যাদুঘরে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সংস্কৃতি ও ঐত্যিবহনকারী ‘ক্ষৃদ্র নৃ গোষ্ঠী’ নামে জাদুঘরে রয়েছে তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন পোশাক, গৃহস্থলির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ। এতেও বিশেষ শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষুদু নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত প্রচারের ব্যবস্থা আছে।
আদিবাসী নেত্রী রবেতা ম্রং বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘ক্ষৃদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত করে ডিসি মহোদয় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এর মাধ্যমে আমাদের তরুণ প্রজন্মরা আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐত্যিবহনকারী বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমাণ্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম হিরু বলেন, জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব মহোদয়ের একক প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হল। এটি শেরপুর জেলার জন্য মাইল ফলক।
এটিকে আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আগামী দিনে এটিকে আরও সমৃদ্ধ করব, এটাই হোক আমাদের মূল লক্ষ্য । আজকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো, এ যাত্রা অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, গারো পাহাড়ের প্রাদদেশে অবস্থিত ছোট একটি জেলা শেরপুর । কিন্তু এ জেলার মুক্তিযুদ্ধের অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। জেলা প্রশাসনের একটি উদ্যোগ ছিল শেরপুরে মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা স্মৃতি সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধকে পরবর্তী প্রজন্মকে জানানোর ব্যবস্থা করা। ‘গজনী অবকাশ’ একটি পর্যটনকেন্দ্র, এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ বেড়াতে আসে। তাই বঙ্গবন্ধুর জীবন ও মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান এবং শেরপুরের মুক্তিযুদ্ধারা কোথায় ও কীভাবে যুদ্ধ করেছিলেন তা সারা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে মূলত এ পর্যটনকেন্দ্রটি বেচে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আজকের দিনটি শেরপুর জেলা প্রশাসনের জন্য স্মরণীয় ও গৌরবের দিন হয়ে থাকবে। আজকে যাত্রা শুরু হলো, ইনশাল্লাহ আমরা পরবর্তীতে শেরপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের ৭১এর স্মৃতি তুলে ধরব এখানে। জাদুঘরে প্রবেশের জন্য কোন টিকিটের ব্যবস্থা রাখেনি। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। আরেকটি উদ্যোগের মধ্যে ছিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনযাত্রা তুলে ধরা। তাদেরকে সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য ‘ক্ষৃদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ জাদুঘর প্রতিষ্ঠতা করা। এটি আমাদের একটি ক্ষুদ্র চেষ্টা, এটি আমরা শুরু করলাম।