নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যাকারী খুনি আখ্যা দিয়ে দ্রুত দেশে এনে বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে খেলাফত মজলিস।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ দাবি জানানো হয়।
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদের উপস্থিতিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বুকে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল খুনি হাসিনার সরকার। যেখানে না ছিল মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, না ছিল বাক স্বাধীনতা।
মৌলিক মানবাধিকার ছিল ভূলুণ্ঠিত উল্লেখ করে বলা হয়, সুস্থ ধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল নির্বাসিত। মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছিল দুর্বিসহ। দেশের ঐ দুর্দিনে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছে, রক্ত ঝরিয়েছে।
সর্বশেষ চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই স্বৈরশাসকের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়- স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রজনতা বিজয়ের এক মাস পূর্ণ হলো। এ মুহূর্তে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে শহীদদের স্মরণ করছি। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আহতদের সুচিকিৎসা ও আশু আরোগ্য কামনা করছি। যাদের আত্মত্যাগে জাতি স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা।
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানকালে শহীদ, চিরতরে অক্ষম ও আহতদের দ্রুত তালিকা প্রণয়নপূর্বক ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা অনুযায়ী আশু ও ক্ষেত্র বিশেষে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করতে হবে।
এতে বলা হয়, অভ্যুত্থানোত্তর বিগত এক মাসে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী ও ছাত্রসমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ও সহযোগীতায় অন্তর্বর্তী সরকার নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।
অপরদিকে ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ায় সৃষ্ট দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি উত্তরণে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। এভাবে পরাজিত শক্তির সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে হবে।
কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের মাধ্যমে ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে উল্লেখ করে বলা হয়, আশা করি আমাদের এই ঐক্য আগামীর বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আরো উঁচু স্থানে নিয়ে যাবে। কিন্তু পতিত স্বৈরাচার ও আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র থেমে নেই।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অভ্যুত্থানকারী ছাত্রজনতা-রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে গড়ে ওঠা অভূতপূর্ব ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছে। ছাত্র-জনতার ঐক্য বিনাশী এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে আহ্বান করা হয় কষ্টার্জিত বিপ্লব যাতে বেহাত হয়ে না যায় সেজন্য সবাইকে আরো সজাগ থাকতে হবে।
বক্তব্যে আরও বলা হয়, ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
বক্তব্যে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়। সেসবের মধ্যে রয়েছে- মানবতাবিরোধী ও গণহত্যাকারী খুনী হাসিনাকে দ্রুত দেশে এনে বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা এবং স্বৈরাচারের দোসর, লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের ‘বিশেষ ট্রাইবুনালে’ দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শহীদ, চিরতরে অক্ষম ও আহতদের দ্রুত তালিকা প্রণয়নপূর্বক ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা অনুযায়ী আশু ও ক্ষেত্র বিশেষে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
একইসঙ্গে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করতে হবে। দেশের ধ্বংসপ্রায় বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, অর্থ ও ব্যাংকিং বিভাগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ সকল বিভাগকে দ্রুত সংস্কারের আওতায় এনে মানুষের কল্যাণে কর্মক্ষম করে তুলতে হবে।
সর্বশেষ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসাইন, জাহাঙ্গীর হোসাইন, অধ্যাপক মো. আবদুল জলিল, প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হোসেন প্রমুখ।