রাজশাহীতে নদী সংলগ্ন এলাকার সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত

ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী : ‘বাঁচলে নদী, বাঁচবে দেশ, বাঁচবে প্রিয় বাংলাদেশ’ এই  স্লোগানকে সামনে রেখে রাজশাহী মহানগরীতে পদ্মা নদী দূষণরোধে নদী সংলগ্ন এলাকার সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন পদ্মা নদী দূষণরোধে নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মেয়র নগরীর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য্য বজায় রাখতে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। সোমবার দুপুর ১২টায় নগরীর অডভার্ড মুনসক্গার্ড পার্কে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত উদ্বুদ্ধকরণ সভায় এই সহযোগিতা কামনা করেন মেয়র। সভা শেষে পদ্মাপাড় পরিদর্শন করেন মেয়র।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, পদ্মা নদীর তীরবর্তি রাজশাহী শহর। যা পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। ৭৫ পরবর্তী এ দেশে দখলের রাজনীতিতে যে যেভাবে পেরেছে নদী, খাল, বিল দখল করেছে। নদী, খাল ড্রেনগুলোকে সলিড ওয়েস্ট ফেলার উত্তম জায়গা মনে করা হয়। বিগত সময়ে দেশের সকল নদীসমূহে লঞ্চ, স্টীমার চলাচল করতো ,দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহে নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নদী, খাল ও ড্রেনে কোন বর্জ্য ফেলবেন না। যে কোন ধরণের প্লাস্টিক বর্জ্য নদীর জীব ও বৈচিত্র্য নষ্ট করে। নির্মাণ সামগ্রী, বর্জ্য সামগ্রী মাটি রাবিশ ইত্যাদি নদীতে ফেলবেন না। বাসাবাড়ী ও দোকানের ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে আপনার এলাকার ভ্যান চালককে দিন। আমাদের গৌরব ও ঐতিহ্যেও অংশ পদ্মা নদীকে সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের। গবাদি পশুর অবাধ বিচরণ রোধ করুন। প্রয়োজনে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন। মহানগরীকে সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ বান্ধব রাখার জন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
মেয়র আরো বলেন, নবগঙ্গা থেকে মিজানের মোড় পর্যন্ত নদীর ধারের ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মা নদীর বিশাল চরকে উন্নয়ন করে এ অঞ্চলকে মূল শহরের যুক্ত করে সেখানে নতুন একটি নগরী গড়ে তোলা হবে। প্রায় চার হাজার কোটি টাকার ওয়াসার প্রকল্প গোদাগাড়ীতে পদ্মা নদী থেকে পানি শোধন করে নগরবাসীকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন এ নগরীর সুনাম সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী এ নগরীকে পরিচ্ছন্ন, সুন্দর বসবাসযোগ্য হিসেবে দেশের মধ্যে উত্তম নগরী রূপে বিবেচনা করছে। দ্রæত নগরায়ণের ফলে এ নগরীতে হাইরাইজড বিল্ডিং নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। একই সাথে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণের ফলে এখনও এখানে ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আগামীতে এ সকল কাজ সম্পন্ন হলে পরিচ্ছন্ন নগরীর এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। নাগরিকদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস বৈদ্যুতিক পোলের নিকট ময়লা ফেলা, দোকান কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিস্কার করে ময়লা ফেলার অভ্যাস পরিবর্তন হচ্ছে না। এ বিষয়ে নগরবাসীকে আরও সচেতন হতে হবে। গৃহকর্মীরা গৃহস্থালী কাজের বর্জ্য উচ্ছিস্ট ড্রেনের মধ্যে ফেলার এ অভ্যাস পরিবর্তনে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিচ্ছন্ন এ শহরটিকে অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

সভায় সিনিয়র সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, পদ্মা নদী ও পাড় দুষণমুক্ত রাখতে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগকে এলাকাবাসীর সহযোগিতা করতে হবে। এলাকাবাসীর সহযোগিতা ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। পদ্মাপাড়কে আকর্ষণীয় ও বিনোদনের ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদারকরণে ট্যুরিস্ট পুলিশিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। বিশিষ্ট পরিবেশ ও নদী গবেষক মাহাবুব সিদ্দিকি বলেন, রাজশাহীর পরিচ্ছন্ন পরিবেশের ফলে ইতোমধ্যে শহরটি আদর্শ নগরীর স্বীকৃতি পেয়েছে। গৃহস্থালি বর্জ্য, কিংবা নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে যেন ড্রেনের পানি প্রবাহ বন্ধ না হয় সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকবে হবে। পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে তরল বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রাজশাহী কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান বলেন, রাজশাহীর মহানগরীর নান্দনিক সৌন্দর্য্য। পদ্মাকে ঘিরে পর্যটন শিল্পকে উন্নয়ন করতে হবে। সুন্দর পরিকল্পনা পদ্মাকে ঢেলে সাজাতে হবে। যা আমাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারে। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি নিজেদের যেখানে আইন প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামানিক বলেন, মেয়র লিটন ‘চলো বদলে দেই রাজশাহী’ শ্লোগানকে সামনে রেখে মহানগরীকে বদলে দিচ্ছেন। আসুন আমরা নিজেরাও বদলে যাই। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলি, শহরের পরিচ্ছন্নতা ও পদ্মা নদী দুষণমুক্ত করতে সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা প্রদান করি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি, মেয়র-১, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, অতীতে পদ্মাপাড় জঞ্জলে পরিপূর্ণ ছিল। রাতে তো দূরের কথা দিনের বেলাতেও এখানে আসা যেত না। খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ থেকে ১৩ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে মেয়র থাকাকালে পদ্মাপাড়ের উন্নয়ন করেন, আলোকায়ন করেন। দ্বিতীয়বার দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে পদ্মাপাড়কে সাজাতে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে দুইটি দৃষ্টিনন্দন ওভারব্রিজের উদ্বোধন করা হয়েছে। পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য্য বজায় রাখতে এলাকাবাসীকে সহযোগিতা করতে হবে। এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে অব্যাহতভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
সভায় সূচনা বক্তব্য দেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের এনভারমেন্টাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। সঞ্চালনা করেন রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু। সভায় মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি আরিফুল হক কুমার, বিশিষ্ট সাংবাদিক আহমেদ শফি উদ্দিন, শাহ মখদুম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আমিনুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মীর তৌফিক আলী ভাদু, রাসিকের কর্মকর্তাবৃন্দ, পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও নদী সংলগ্ন এলাকাবাসী অংশ নেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title