বগুড়া প্রতিনিধি: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিকল্প চায়; কিন্তু আমরা আজও বিকল্প শক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারিনি। পদ-পদবি পাওয়া কঠিন নয়; কিন্তু এর মূল্য দিতে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী হতে হবে। আওয়ামী লীগের জন্য জাতীয় পার্টি দুর্বল ও ধ্বংস হয়েছে। জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ দাবিয়ে রাখার কারণে আমরা বিগত দিনে স্বাধীন রাজনীতি করতে পারিনি।
রোববার বিকালে বগুড়া শহরের শহিদ টিটু মিলনায়তনে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, কিছু লোক বলে জাতীয় পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত। আমি বলি তা সঠিক নয়; আমরা এক আছি। আর যারা জাতীয় পার্টিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
জিএম কাদের বলেন, জনগণের মধ্যে নির্বাচনের উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। জনগণের চোখে যা নির্বাচন আওয়ামী লীগ তা করে না। তারা বিনা ভোটে নির্বাচন করতে চায়। জাতীয় পার্টি তা কখনো চায় না। ঢাকা-১৭ আসন, যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বাস করেন। সেখানেও সঠিক নির্বাচন হয়নি। কেন্দ্র থেকে লোক বের করে দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকার চাই না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে দুভাবে বিভক্ত করে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিরোধী পক্ষ। যারা সরকারের বিপক্ষে কথা বলে তাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বলা হয়। আওয়ামী লীগ ব্রিটিশদের মতো ভাগ কর ও শাসন কর নীতিতে বিশ্বাস করে। তাই দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, আওয়ামীতন্ত্র রয়েছে। দেশের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। তাই দেশকে আওয়ামী লীগতন্ত্র থেকে বের করতে হবে।
জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির রাজনীতি দুর্বল হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী। তারা জাতীয় পার্টিকে কখনো স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে দেয়নি। আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি। তারা চায় জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ‘বি’ টিম হিসেবে টিকে থাকবে। এজন্য আমাদের তৃণমূল থেকে শক্তিশালী হতে হবে।
বগুড়া জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপির সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম ওমরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন- সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি এবং অতিরিক্ত মহাসচিব শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। প্রধান বক্তা ছিলেন মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা বগুড়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদার, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব মন্টু পশারী, শিবগঞ্জ উপজেলা সভাপতি এরফান আলী, শেরপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ওমর ফারুক, আদমদীঘি উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস হাসান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি লুৎফর রহমান সরকার, জেলা যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক সঞ্চয়, জেলা মহিলা পার্টির সভাপতি আসমা আকতার, সদর জাতীয় পার্টির সভাপতি এইচএম ইকবাল, শহর জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তাহের আকন্দ, গাবতলী জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী রতন, সারিয়াকান্দি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোকছেদুল আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলই জাতীয় পার্টিকে নির্যাতন করেছে।
সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলই ক্ষমতায় যেতে আমাদের পাশে চায়। মরহুম রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নয় বছরের শাসনামলে দেশের মানুষের ভাগ্যের অনেক উন্নয়ন করেছেন। আমরা দেশে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে সভাপতি হিসেবে জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাবেক এমপি ও বিরোধীদলীয় সাবেক চিপ হুইপ নুরুল ইসলাম ওমরের নাম আসে। কিন্তু দুই নেতার মধ্যে মতবিরোধ থাকায় মুজিবুল হক চুন্নু কমিটি ঘোষণা দেননি। তিনি এজন্য ১৫ দিনের সময় নিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে ওই দুই নেতাসহ অন্যদের নামসহ কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
এদিকে সম্মেলন শুরুর আগে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নেতাকর্মী বিভিন্ন যানবাহন ও হেঁটে সম্মেলন স্থলে আসেন। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর প্রধান অতিথি জিএম কাদের বেলুন উড়িয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।