বিদ্যুতের মূল্য কমালে বাংলাদেশ ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করবে। বর্তমানে প্রতি ওয়াট বিদ্যুৎ ৬ টাকায় ক্রয় করছে বাংলাদেশ। এটি ৫ থেকে সাড়ে পাঁচ টাকায় বিক্রি করলে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে পুনরায় চুক্তি করতে পারে বাংলাদেশ।
আগামী মার্চ মাসেই ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ৫ বছরের চুক্তি করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডিজিটাল কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্বোধন করেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান জানান, ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ৫ বছরের চুক্তি ছিল। চুক্তি শেষের পর্যায়ে, এখন নতুন করে আবারো চুক্তি হবে কি না এ নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা যদি বিদ্যুতের দাম কমায়, তবে আমদানি করতে কোন অসুবিধা নেই। আমরা এখন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি তাতে আমাদের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ত্রিপুরা থেকে এখন আমদানি করার বিষয় ভাবা হচ্ছে ৩টি কারণে। প্রথমত, বিদ্যুতের একটি বিকল্প উৎস্য আমাদের হাতে রইল। দ্বিতীয়ত, মূল্য কম থাকায় আমদানি করবো। তৃতীয়ত বর্ডার পর্যন্ত আমাদের একটি সঞ্চালন লাইন টানা রয়েছে।
একই বিভাগের অন্য একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আনার আর প্রয়োজন নেই। কারণ বাংলাদেশই এখন তার চাহিদার সম্পূর্ণটা উৎপাদন করতে পারে। তাছাড়া কুমিল্লার গ্যাস ব্যবহার করে সেখানে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যাতে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আনার জন্য যে সঞ্চালন লাইন করা হয়েছিল তা আমরা ব্যবহার করতে পারবো। তিনি বলেন, যদি ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতেই হয়, তবে ত্রিপুরা সরকারের আমদানির উপর থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স ও আমদানি শুল্ক মওকুফ করতে হবে। এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। সম্প্রতি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজকুমার সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিটি নবায়নের জন্য অনরোধ করেছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাকে আশ^স্ত করেছেন, তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলবেন। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব মন্ত্রীকে বাংলাদেশের দাবির বিষয়েও কথা বলেছেন। ত্রিপুরার গোমতী জেলার ৭২৬ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক পালটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে। আমদানি করা এ বিদ্যুতের দাম পড়ে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ টাকা। ত্রিপুরা ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের কাছে বিক্রয় করে গত বছর প্রায় ৪৫ কোটি রুপি আয় করেছে।
বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সম্প্রতি সিপিডির এক সেমিনারে বলেছেন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশের লাভ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, ১০০ মেগাওয়াট একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে ১০০০ একর জমি নষ্ট হয়। বিনিয়োগ করতে হয় ২ বিলিয়ন ডলার। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি করতে সময় লাগে ৫ বছর। তা ছাড়া আমদানি করা বিদ্যুতের দামও কম পরে। এ হিসাবে আমদানি করা বিদ্যুই ভাল।
উল্লেখ্য, ত্রিপুরার পালটানায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি পরিবহনে বাংলাদেশ ট্রানজিট দিয়েছিল। বাংলাদেশের আশুগঞ্জ দিয়ে পালটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি বিনাশুল্কে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অবিশ^াস্য মাত্র দেড় বছরে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে উৎপাদনে গিয়েছিল। পালটানা থেকে আখাউরা সীমান্ত পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিবহনে সঞ্চালন লাইন তৈরি করেছে ভারত। আর আখাওড়া থেকে জাতীয় গ্রিড পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইন তৈরি করেছে বাংলাদেশ।