বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষের চেতনায় এবং গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ ২০২১ বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদ্যাপিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান, এমপি। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন এবং আমন্ত্রিত সামরিক ও অসামরিক অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কোস্ট গার্ড এর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, নাবিক, অসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বীরত্বপূর্ণ ও সাহসী কার্যক্রমের জন্য পদক বিতরণ করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে সমুদ্র বানিজ্য ও উপকূলীয় জনগনের নিরাপত্তা বিধানে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এ বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার বদ্ধপরিকর। খুব শীঘ্রই যুক্ত হবে অত্যাধুনিক অফশোর প্যাট্রল ভেসেল (ওপিভি), হোভারক্রাফ্ট ও অন্যান্য উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন জলযান। এ সকল জলযান দ্বারা এ বাহিনী অর্পিত দ্বায়িত্ব পালন করে দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধনে তাদের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।” তিনি আরও বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত কোস্ট গার্ড এর বিভিন্ন বেইজ, স্টেশান ও আউটপোস্টে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে এ বাহিনীর পরিপূর্ণ বিকাশ সুনিশ্চিত করা হবে।” এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল এম আশরাফুল হক বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুযোগ্য ও যুগপোযোগী দিক নির্দেশনার ফলে এ বাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এর সদস্যগণ দেশ প্রেমের চেতনা সমুন্নত রেখে তাদের অটুট মনবল, নিরলস কর্মস্পৃহা ও কঠোর প্ররিশ্রমের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক ঘোষিত রূপকল্প ২০৩০ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে মর্মে অঙ্গিকার ব্যক্ত করছি।” সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদূর প্রসারী ভাবনার ফলেই আমাদের নিজস্ব সমুদ্র এলাকা দাবী সম্বলিত ÒThe Territorial Waters and Maritime Zones Act, 1974Ó প্রণীত হয়। পরবর্তীতে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রতিষ্ঠার সোপান রচনা করেন। বিগত ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় মহান জাতীয় সংসদে ‘‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বিল’’ উত্থাপন করে। যার প্রেক্ষিতে এ বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী থেকে ২টি জাহাজ ও ২টি বোট এবং প্রেষণে আগত ২২০ জন নৌ সদস্য নিয়ে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড তার পথ চলা শুরু করে। পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় এ বাহিনীতে নতুন নতুন প্লাটফর্ম ও অবকাঠামো সংযোজিত হয়েছে। এর ফলে বাহিনীর অপারেশনাল কর্মকান্ডে ব্যাপক গতি সঞ্চার হয়েছে এবং অর্জিত হয়েছে নানা সাফল্য। কোস্ট গার্ডের নিরলস প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর ঝুঁকিপূর্ন বন্দরের তালিকা থেকে মুক্ত হয়ে একটি নিরাপদ বন্দরে পরিনত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে কোস্ট গার্ড কর্তৃক ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে চর ও দ্বীপাঞ্চলের স্থানীয় জনগণের মাঝে বিশুদ্ধ/সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা, উপকূলীয় জেলেদের জন্য লাইফ জ্যাকেট ও রেইনকোট বিতরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত গরীব ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদান ইত্যাদি। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে বিশ্বব্যাপী চলমান কোভিড-১৯ মহামারির দুঃসহ দিনগুলোয় উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় তিন কোটি মানুষের মাঝে সাহস আর ভরসা জুগিয়ে এসেছে কোস্ট গার্ড এর সদস্যরা। এছাড়াও করোনাকালীন ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ব্যবস্থাপনা ও জননিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অসহায়, দুঃস্থ, কর্মহীন এবং শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে কোস্ট গার্ড। আসন্ন দিনগুলোতে দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণে সততা, পেশাদারিত্ব এবং দেশপ্রেমের চেতনাকে বুকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে বদ্ধ পরিকর কোস্ট গার্ড। সর্বোপরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে জাতির প্রত্যাশা পূরণে নিরলস কাজ করে যাবে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title