দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ায় নব্য জেএমবির মিডিয়া শাখার প্রধানসহ ৪ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু দেশি-বিদেশী অস্ত্র, গুলি, জিহাদি বই ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি।
৭ নভেম্বর শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বগুড়ার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান, রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন।
বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের শিবগঞ্জ থানার চন্ডিহারা বন্দরের পাশে খোলা মাঠে বৈঠক থেকে শুক্রবার (৬ নভেম্বর) রাত পৌনে ১২টায় চার জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- খন্দকার গোলাম সারোয়ার, সাং জগতপোড়া, টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর উপজেলার জগতপোড়ার খন্দকার গোলাম সারোয়ারের ছেলে নব্য জেএমবির মিডিয়া শাখার প্রধান দায়িত্বশীল জাকারিয়া জামিল (৩১)। সে বর্তমানে ঠিকানা ৫৮/সি পশ্চিম রাজাবাজার, শেরে বাংলানগর ঢাকা অবস্থান করে। নব্য জেএমবি’র আইটি শাখার সদস তানভীর আহম্মেদ ওরফে আবু ইব্রাহিম (২৫), সে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার তরশ্রীরামপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে, বর্তমানে দক্ষিণ বনশ্রী, খিলগাঁও, ঢাকায় অবস্থান করে। সক্রিয় সদস্য আতিকুর রহমান (২৮)। সে ময়মনসিংহের চরশ্যামরামপুর গ্রামের মোঃ আব্দুর রহমানের ছেলে এবং একই গ্রামের মোঃ আব্দুল হাকিমের ছেলে আবু সাঈদ (৩২)।
ডিআইজি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তানভীর ও জামিল ঢাকার আশুলিয়ায় জঙ্গি হামলার পলাতক আসামি। পুলিশ তাদেরকে খুঁজছিল। উন্নত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই দুই জনের অবস্থান বগুড়ায় বুঝতে পেরে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল চন্ডিহারা বন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করে। তারা খোলা মাঠে বসে পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণের বৈঠক করছিল। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১ বিদেশি পিস্তল, একটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২রাউন্ড গুলি, একটি দেশি তৈরি ওয়ান শুটার গান, দুইটি কার্তুজ, ৩টি অত্যাধুনিক বার্মিজ চাকু, ১টি চাপাতি, ১ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য (পটাশিয়াম ক্লোরেট), ২টি লাল টেপ, ৪টি ব্যাটারি, কিছু পরিমাণ তার উদ্ধার করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, নব্য জেএমবির মিডিয়া শাখার প্রধান জাকারিয়া জামিল জঙ্গি সংক্রান্ত অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনা আরবি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে প্রচার করতো। তানভীর আহম্মেদ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিভাগের ছাত্র। এ বছরের শুরুতে ঢাকার আশুলিয়ায় তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই ও ড্রোন তৈরির সরঞ্জামসহ তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ড্রোন তৈরির মাধ্যমে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন তানভির। এছাড়াও আতিকুর রহমান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র। সে নতুন সদস্য এবং অর্থ সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি যুদ্ধ করার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক দিয়ে ৫০টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বোমা বানানো সম্ভব জানায় ওই উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা।
এসময় বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঁঞা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়দার আলী, আব্দুর রশিদ, সনাতন চক্রবর্তী, বগুড়া সদর থানার হুমায়ুন কবীর, ডিবির ওসি আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানায় অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইনে পৃথক পৃথক মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছিল। আটক ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।