দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: আগামী ৩০ জানুয়ারি শনিবার অনুষ্ঠিত হবে বগুড়ার ৫ পৌরসভার নির্বাচন। এসব পৌরসভা এলাকায় নির্বাচনকে সামনে রেখে মহামারী করোনা ও শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে গভীররাত অবধি নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্ব মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা চোখের ঘুম হারাম করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। সেই সাথে গানে গানে, নানা ছন্দে বিভিন্ন কৌশলে মাইকে প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। তবে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে টেনশনে রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দলীয় প্রার্থী নেতাকর্মীরা। পৌর এলাকার প্রতিটি সড়ক ও মোড়ের অলিগলিসহ বাড়ি, দোকানপাট ছেয়ে গেছে পোস্টারে পোস্টারে। কোথাও একটু জায়গাও ফাঁকা নেই। নির্বাচন ঘিরে বেড়ে গেছে পৌরসভার সৌন্দর্য ও ব্যস্ততা।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রচার-প্রচারণায় পোস্টারগুলো নির্বাচনি আমেজ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে ভোটের লড়াইয়ে নিজেদের অস্তিত্বও জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা। শহরের অলিগলিসহ চায়ের দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও পোস্টার। চলছে উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, মিছিল, গণসংযোগ ও মনমুগ্ধকর মাইকিং প্রচারণা। পোস্টারে পোস্টারে ছ্ঁেয়ে গেছে পৌর শহর এলাকাগুলো। কেউ বলছে ধানের শীষ আবার কেউ বলছে নৌকা। যে যাই বলুক ভোটাররা এবার যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে ভোট প্রদানে অনড় রয়েছে।
তৃতীয় ধাপে বগুড়া জেলার পাঁচটি পৌরসভার নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৩০ জানুয়ারি। নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী জেলার শিবগঞ্জ, ধুনট, নন্দীগ্রাম, কাহালু ও গাবতলী পৌরসভায় ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। ৫টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ বিএনপির মেয়র প্রার্থীরাই মূল লড়াইয়ে রয়েছে।
সেই সঙ্গে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরগণ ভোটের মাঠে থাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বগুড়ার ৫ পৌরসভায়। ভোটগ্রহণের সময় কাছে চলে আসায় প্রার্থীরা নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভায় বর্তমান মেয়র ও বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মানিক এবারো নৌকা মার্কা নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। আর ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মতিয়ার রহমান মতিন। জাগপা থেকে হুক্কা প্রতীক নিয়ে সিরাজুল ইসলাম। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন নারিকেল গাছ প্রতীকে কৃষকদল নেতা আব্দুল গোফ্ফার। পৌর কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন (পুরুষ) ৩২ ও মহিলা ১১ জন। ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৫ জন।
নন্দীগ্রাম পৌরসভায় আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিছুর রহমান, বিএনপি থেকে ধানের শীষে সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা সুশান্ত কুমার শান্ত। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জগ প্রতীকে কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল। নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন, কাউন্সিলর পদে ২৭ ও সংরক্ষিত নারী আসনে ১৪ জন লড়ছেন।
ধুনট পৌরসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ টিআই নুরুন্নবী তারিক নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। আর ধুনট পৌরসভার বর্তমান মেয়র বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এজিএম বাদশাহ এবারো জগ প্রতীক (স্বতন্ত্র) নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পৌর বিএনপিন যুগ্ন আহবায়ক ও সাবেক মেয়র আলিমুদ্দিন হারুন মন্ডল (ধানের শীষ) ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সাহা সন্তোষ (কাস্তে)। মেয়র পদে ৪ প্রার্থী এবং কাউন্সিলর পদে ৩৩ প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনে ১০ প্রার্থী রয়েছে।
কাহালু পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী হেলাল উদ্দিন কবিরাজ নৌকা প্রতিক, উপজেলা বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান ধানের শীষ প্রতীকে লড়াই করছেন। নির্বাচনে মহিলা কাউন্সিলর পদে ৯ জন পুরুষ কাউন্সিলর পদে ২৮ জন লড়াই করছে। মোট ভোটার রয়েছে ১১ হাজার ১৪০ জন।
গাবতলী পৌরসভায় ৬ জন মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিনুল হক শিলু দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতিকে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। বিএনপি নেতা থেকে বর্তমান মেয়র সাইফুল ইসলাম ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলার ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতা মিজানুর রহমান মানিক হাতপাখা প্রতীক, জাতীয় পার্টি থেকে ফজলে রাব্বী টুনু লাঙ্গল প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আইয়ুব হোসেন রাজু জগ প্রতীকে ও সাজেদুর রহমান রাসেল খেজুর গাছ প্রতীকে। পুরুষ প্রার্থী কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন ও মহিলা কাউন্সিলর প্রাথী ১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। মোট ভোটার ১৭ হাজার ৪২৩ জন।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মাহবুব আলম শাহ্ জানান, তৃতীয় ধাপের ঘোষিত তফসিলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সার্বিক কার্যক্রম চলমান আছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগসহ পৌর এলাকায় সার্বক্ষনিক তদারকির জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। প্রয়োজনমত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে প্রস্তুত। তিনি আরো জানান, বগুড়ায় ৩য় ধাপের নির্বাচনে ৫টি পৌরসভার ১৯ মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। আগামী ৩০ জানুয়ারি উল্লেখিত পৌরসভায় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। এর আগে দ্বিতীয় ধাপের বগুড়ার তিনটি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পৌরসভা হলো বগুড়ার শেরপুর, সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার। তাছাড়া ২৮ ফেব্রæয়ারি বগুড়া সদর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।