আবু নাসের হুসাইন :: আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ মাহবুব হোসেন বলেছেন, ফরিদপুরে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত গৃহের প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এই মাসের সুবিধাজনক সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরগুলো গৃহহীনদের প্রদান করবেন। তিনি গতকাল শনিবার দিনব্যাপী ফরিদপুর জেলার সদরপুর, মধুখালী ও সদর উপজেলার নির্মিত ঘরগুলো পরিদর্শন কালে একথা বলেন। এদিকে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার নির্মিত ঘরের বাসিন্দাদের জন্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন। একই সাথে বাসিন্দাদের সরকার কর্তৃক পরিচালিত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষ এবং স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা হবে বলেও উল্লেখ করেছেন।
সারা দেশে গৃহহীনদের চলতি মাসেই ৬৬ হাজার ঘর দিচ্ছে সরকার। আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মান চলছে সবস্থানে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার যে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে একটি মানুষও যেন গৃহহীন না থাকে সেলক্ষ্যে ঘরগুলো নির্মান করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৬৬ হাজার ঘর নির্মান করে দেয়া হচ্ছে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে। প্রত্যেকটি ঘর ২ শতাংশ করে জায়গার উপর নির্মান করা হচ্ছে-একই আদলে তৈরী ঘরগুলো।
জেলার সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের হাওলাদার ডাঙ্গী, মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের নড়িখালী, এবং জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের কোষাগোপালপুর গ্রাম পরিদর্শন করেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ মাহবুব হোসেন। এসময় তার সাথে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সাইফুল কবির, সদরপুর উপজেলা নির্বঅহী অফিসার পূরবী গোলদার, মধুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তফা মনোয়ার, ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজাসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সুবিধাভোগী জনতা উপস্থিতি ছিলেন।
পরিদর্শনকালে প্রকল্প পরিচালক মোঃ মাহবুব হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে মুজিবশতবর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সেই ঘোষনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা সারা বাংলাদেশে কাজ করছি। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সম্মানিত জনপ্রতিনিধি সমন্বয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ৬৬ হাজার ঘর নির্মানের জন্য ১২শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি ফরিদপুরের নির্মান কাজ সম্পর্কে বলেন, আমার দেখা মতে প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এই মাসের সুবিধাজনক সময়ে মাননীয় প্রধানন্ত্রী ঘরগুলো উপকার ভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করবেন। ২ শতক খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে কবুলিয়াত এবং এই নির্মিত ঘরটি ভূমিহীন এবং গৃহহীন মানুষের কাছে হস্তান্তর করা হবে যাদের কোন ঠিকানাই ছিল না। এটি সারা পৃথিবীতে একটি রেকর্ড।
জনাব মাহবুব আরো বলেন, দলিলসহ বিনা পয়সায় এতসংখ্যক ঘর হস্তান্তর করা পৃথিবীতে আর নজির নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দুই ধরনের তালিকা করেছি। একটি ক শ্রেণি, যার জমিও নাই ঘরও নাই অপরটি খ শ্রেণি ; যার জমি আছে কিন্তু ঘরটি জরাজীর্ণ বা ঘর নেই। ক শ্রেণি সারা বাংলাদেশে ৪৯২ উপজেলা থেকে ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৩৬১ জন তালিখা করা হয়েছে। খ শ্রেণি ৫ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৩১ টি তালিকা করা হয়েছে। সর্বমোট ৮ লক্ষ ৮৫ হাজার ২২। প্রকল্প পরিচালক উল্লেখ করেন, প্রায় ৯ লক্ষ পরিবারকে পর্যায়ক্রমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গৃহ প্রদান করবেন। এই মুজিব শতবর্ষে প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার কাজ চলছে। এই মাসে হস্তান্তর করা হবে। এই বছর আরো একলক্ষ হস্তান্তর করা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৯ লক্ষ ঘর বানানো হবে।
পরিদর্শন কালে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, এই পর্যায়ে আমাদের ফরিদপুরে ১৪৭০ টি ঘর নির্মিত হচ্ছে এবং আমরা আশা করছি সরকার নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ এই মাসে যেকোন দিন বা সুবিধাজনক সময়ে আমরা হস্তান্তর করতে সক্ষম হবো। ইতিমধ্যে আমরা ঘরগুলোর সুবিধা ভোগী নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের কবুলিয়াত সম্পাদন সম্পন্ন করেছি। আমরা উপকার ভোগীদেরকে জেলা টাস্কফোর্সের মাধ্যমে নির্বাচন করে তাদের অনুকূলে ঘর বরাদ্দের জন্য যে আনুষ্ঠানিকতা সে কাজ গুলো আমরা প্রস্তুত করেছি।
জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, প্রত্যেকটি ঘর নির্মান প্রায় ৯০ ভাগ হয়েছে এবং ঘরের ভিতরে স্যানিটেশন এবং ইলেকট্রিসিটিসহ নগরিক জীবনের নূন্যতম যে সুবিধাগুলো সেগুলো প্রদান করা হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় পরিবারের জন্য উপহার হিসেবে এসব আশ্রয়স্থল করে দিচ্ছেন। এই কাজ বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।