প্রণোদনা প্যাকেজ: যারা ঋণ পেয়েছেন তাদের আর নয়

করোনা ভাইরাস মহামারির ক্ষতি কাটাতে সরকার শিল্প ও সেবা খাতের জন্য যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেই প্যাকেজের ঋণ এখন পর্যন্ত পায়নি তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এখন থেকে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে শিল্প ও সেবা খাতের ক্ষতিগ্রস্ত যে সকল প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় অদ্যাবধি সুবিধা প্রাপ্ত হয়নি সে সকল প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।

বুধবার (২৮ জুলাই) সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত বছরের ১২ এপ্রিল এবং ২৫ জুন ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় আর্থিক প্রণোদনা’ শীর্ষক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রথম প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের যে সকল প্রতিষ্ঠান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুধুমাত্র সে সকল প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় সুবিধা প্রাপ্ত হচ্ছে। আলোচ্য প্যাকেজের আওতায় সীমাতিরিক্ত চাহিদার বিপরীতে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান যাতে এ প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা ভোগ করতে পারে সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

দ্বিতীয় অর্থাৎ ২৫ জুনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, এই প্যাকেজের ঋণ প্রাপ্যতার সমপরিমাণ অর্থ কোন গ্রাহকের অনুকূলে এক বছরে প্রদান করা সম্ভব না হলে অবশিষ্ট প্রাপ্য অর্থ প্যাকেজের অবশিষ্ট মেয়াদের মধ্যে প্রদান করতে হবে।

বুধবারের নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘আলোচ্য প্যাকেজের আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য প্রদত্ত ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা স্বল্প সংখ্যক গ্রাহকদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত না করে ক্ষতিগ্রস্ত অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে উক্ত সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা যাচ্ছে যে, ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের ক্ষতিগ্রস্ত যে সকল প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় অদ্যাবধি সুবিধা প্রাপ্ত হয়নি সে সকল প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।’ এ বিষয়ে আগে জারি করা প্রজ্ঞাপনগুলোর অন্য নির্দেশনা বলবৎ থাকবে বলে নতুন প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছরের ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন, যা ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। ওই প্যাকেজের আওতায় শিল্প ও সেবা খাতের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ তহবিল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ১২ এপ্রিল ওই প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নীতিমালায় বলা হয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ দেবে।এই ঋণে সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণ গ্রহীতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাকি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। ব্যাপক চাহিদার কারণে পরে এই প্যাকেজের আকার ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন পর্যন্ত এই প্যাকেজের আওতায় মোট ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title