নেত্রকোণা প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনায় কিশোরী মারুফা ধর্ষণ ও হত্যার বিচার এবং মোহনগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জের প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১মে) দুপুরে পৌরসভার সামনের সড়কে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে নেত্রকোণা বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ ও নেত্রকোণা সাধারণ ছাত্র সমাজের পৃথক পৃথক ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৃজন ঘোষ সজীব, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন জেলা শাখার সভাপতি দেবশংকর সাহা রায় ভিপি দেবু, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল আউয়াল শাওন, স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাকিল হাসান, পৌর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম রানা, এস এম মোহিত চৌধুরী, ফাহিম রহমান খান পাঠান, শুভ সরকার, অভিজিৎ সেন রূপনসহসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ।
এ সময় বক্তারা বলেন, দুর্বল এফআইআর-এর কারণেই চেয়ারম্যান কাঞ্চন ধর্ষণ ও হত্যা করার সাত দিনের মধ্যে জামিন পেয়ে গেছে৷ ধর্ষক ও খুনীকে যে বা যারাই সহায়তা দেয় তারা দেশের শত্রু, বিবেকের শত্রু৷ এই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সকলকে আহ্বান জানান বক্তারা। এছাড়া, অভিযুক্ত সিংধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চনের ফাঁসির দাবি এবং সেই সাথে জেলা আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে বহিস্কারেরও দাবি জানান বিক্ষোব্ধ জনতা।
বক্তারা আরো বলেন, এলাকায় বিভিন্ন মহলে জনশ্রুত রয়েছে সরকারি সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মামা পরিচয়ে এ চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছেন । আর এসব অপকের্মর কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত ১৯ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে লিখিত চিঠির মাধ্যমে সাময়িক বরখাস্ত করেন এই চেয়ারম্যানকে।
মানববন্ধন শেষে নেত্রকোণা সাধারণ ছাত্র সমাজের নের্তৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
উল্লেখ্য, গত ৯মে (শনিবার) বিকালে বারহাট্টা সিংধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চনের মোহনগঞ্জের হাসপাতাল রোডের বাসায় কিশোরী মারুফা আক্তারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। কিশোরী মারুফা আক্তার আত্মহত্যা করেছে বলে লাশ নিয়ে চেয়ারম্যান কাঞ্চন নিজেই হাসপাতালে যান। পরে শিশুটির গায়ে শরীরের স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখে হাসপাতালের এবং স্থানীয় মানুষদের মাঝে সন্দেহ হলে থানায় খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্তের পর লাশ মারুফার বাবার বাড়ি সিংধা এলাকায় চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশে হওয়ায় ভয়ে কলমাকান্দা নানার বাড়িতে নিয়ে দাফন কার্য্য সম্পন্ন করে। চেয়ারম্যান বিভিন্ন ভাবে মারুফার মা আকলিমা আক্তারকে ভয় ভীতি দেখিয়ে আত্মহত্যা মামলা লিপিবদ্ধ করানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করে। পরে বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে ঘটনাস্থল মোহনগঞ্জ থানা ১১ মে (সোমবার) অভিযোগ দাখিল করেন। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে চেয়ারম্যানকে ওইদিন সন্ধ্যায় আটক করে ১২মে (মঙ্গলবার) আদালতে প্রেরণ করে। পরে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে প্রথমে নিম্ন আদালতে হাজির করা হলে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান আদালত । ১৪মে (বৃহস্পতিবার) জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করলে চার্জশিট আদালতে প্রেরণের আগেই জামিনে বেরিয়ে যান কাঞ্চন চেয়ারম্যান।