দফায় দফায় ভাঙনের পরও ৩৪পেরিয়ে ৩৫শে জাতীয় পার্টি

 

আজ জাতীয় পার্টি আত্মপ্রকাশের ৩৫ বছর পূর্ন হয়েছে।আজকের এই দিনে ১৯৮৬ সালের এরশাদের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করে দলটি। ১৯৮৫ সালের ১৬ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিলো। সেই ফ্রন্ট বিলুপ্ত করে ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি নামে নতুন দল আত্মপ্রকাশ করে।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন অধ্যাপক এম এ মতিন। ২১ প্রেসিডিয়ামসহ নির্বাহী কমিটির আকার ছিল ৬০১ জন। জোটের শরিক জনদল, ইউপিপি, গণতান্ত্রিক পার্টি, বিএনপি (শাহ),মুসলিম লীগ (সা) ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন সেদিন জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিল। কথিত আছে কাউকে কাউকে যোগদানে বাধ্য করা হয়েছিল তখন।

জাতীয় পার্টির মতো আর কোন রাজনৈতিক দল এত দফায় দফায় ভাঙনের শিকার হয়নি। জাতীয় পার্টিথেকে বের হয়ে গিয়ে প্রথম পৃথক জাতীয় পার্টি (মিম) গঠন করেন মিজানুর রহমান ও আনোয়ারহোসেন মঞ্জু। দ্বিতীয় দফায় ভাঙনের শিকার হয় নাজিউর রহমান মঞ্জু ও কাজী ফিরোজ রশীদেরনেতৃত্বে। সর্বশেষ পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করেন প্রয়াত কাজী জাফর আহমদ। বর্তমানে জাতীয়পার্টির— জাতীয় পার্টি (জাপা), জেপি, বিজেপি ও জাতীয় পার্টি (জাফর) নামে ৪টি ধারা বিদ্যমান।

চার খণ্ডিত অংশের মধ্যে জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অপর দুই অংশ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও জাতীয় পার্টি (জাফর) বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে যুক্ত।

বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। জোটথেকে ২৬টি আসন দেওয়া হয়। আর ১৪৬টি আসন রাখা হয় উন্মুক্ত। জোটগত আসনে ২১টি, উন্মুক্ত ১টিসহ ২২টি আসনে বিজয়ী হন এরশাদের প্রার্থীরা। সংসদে জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৪টি। মোট ২৬ আসন নিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

অনেকে মনে করেছিলেন এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টি ভেঙে টুকরো টুকরো হবে। কিন্তু তাদেরসেই ভবিষ্যত বাণী ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর পর পার্টির হাল ধরেছেন তার ছোট ভাই প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ কাদের। বিভাগীয় সাংগঠনিক সভা, সাংগঠনিক টিম গঠন ও জেলায় জেলায় সভা সমাবেশের মাধ্যমে ক্ষেত্র বিশেষে জাতীয় পার্টিকে এখন আরও বেশি উজ্জীবিত দেখাচ্ছে।

এরশাদের মৃত্যূর পর পার্টিতে ভাটার টান লক্ষ্যণীয় হলেও কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দলটি। এতদিন যারা জিএম কাদেরের ছায়াও মাড়াতেন না সেই সব সিনিয়র নেতাদের এখন হরহামেশা দেখা যাচ্ছে বনানী অফিসে। এমনকি এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থাতেও যারা পার্টির কর্মসূচি অনেকটা এড়িয়ে চলতেন তারাও এখন সরব।

অনেক শঙ্কা থাকলেও ২৮ ডিসেম্বর সফলভাবেই কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। কাউন্সিলে প্রধান পৃষ্ঠপোষক, পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। এরইমধ্যে কো-চেয়ারম্যানও অতিরিক্ত মহাসচিবদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত জাতীয় পার্টি ভোটের সমীকরণেও দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। আসন সংখ্যায় কিছুটা হেরফের হলেও ভোটের সূচক সব সময় নিম্নগামী। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে কাস্টিং ভোটের ১১.৯২ শতাংশ পেয়েছিলো জাতীয় পার্টি। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ১০.৬৭শতাংশ, আর ২০০১ সালের ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট পায়৭.২৫ শতাংশ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পেয়েছে মাত্র ৭.০৪ শতাংশ। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন অংশ নেয়। কিন্তু যে আসনেই জোট ছাড়া নির্বাচন করেছে সেখানেই ধরাশায়ী হয়েছেন দলটির প্রার্থীরা।

জাতীয় পার্টির দুর্গ খ্যাত রংপুর ও গাইবান্ধা থেকেও দিন দিন গুটিয়ে যাচ্ছে দলটি। রংপুর বিভাগের ২২ আসনের মধ্যে মাত্র ৬টি আসনে রয়েছে জাপার এমপি। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলও আশাব্যঞ্জক নয়। মাত্র একটি উপজেলায় জাপার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title