নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার প্রথম ডোজ টিকাদান কর্মসূচি আজ (২৬ ফেব্রুয়ারি) শেষ হচ্ছে এমন খবরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা মানুষের ঢল নেমেছে। টিকাপ্রত্যাশী অসংখ্য নারী-পুরুষ গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। কোনো ধরনের নিবন্ধন কিংবা কাগজপত্র ছাড়াই নির্ধারিত বুথে আজ টিকা দেওয়া যাচ্ছে। তবে এসব টিকা কেন্দ্রে অব্যবস্থাপনার চিত্র বেশ লক্ষ্যণীয়।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭১ ও ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে বিভিন্ন অস্থায়ী টিকা কেন্দ্র ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
একদিনে এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে দেশব্যাপী ২৮ হাজার বুথে টিকা কার্যক্রম চলছে। এসব বুথে টিকা দেওয়ার কাজে যুক্ত রয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক মিলে মোট ১ লাখ ৪২ হাজার জন। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে ৩০ থেকে ৫০টি করে বুথে টিকা দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে নারী-পুরুষ আলাদা লাইনে টিকা নিতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ৭১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের টিকা কেন্দ্রের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে টিকাপ্রত্যাশীরা অপেক্ষা করছেন।
টিকা কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করা আলম নামে এক কর্মী জানান, সকাল থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছে। যারা আসবে তাদের টিকা দেওয়া হবে। ৭১ নম্বর ওয়ার্ডে আরও তিনটা কেন্দ্র আছে। ৭২ নম্বরেও আছে, কিন্তু অনেকে না জেনে এখানে বেশি ভিড় করছে।
টিকার জন্য অপেক্ষা করা আয়শা বেগম নামে এক নারী জানান, সকাল সাড়ে সাতটায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। দেড় ঘণ্টা হয়েছে টিকা পাইনি। যে ভিড় দেখছি আরও ঘণ্টা খানেক সময় লেগে যাবে বলে তিনি জানান।
টিকার জন্য লাইনে দাঁড়ানো সোলেমান বলেন, আজকে পর প্রথম ডোজ আর দেবে না। গতকাল নিবন্ধন করেছি। আজকে সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখানে যে লাইন দেখছি দুই ঘণ্টা লেগে যাবে। টিকা দেওয়া শুরু করেছে দেরি করে। যদি সময়মত শুরু হতো এতো সময় লাগতো না।
দেরিতে টিকার কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, প্রথমে প্রস্তুতি নিতে একটু সময় লেগেছে, তাই দেরি হয়েছে। তবে প্রস্তুতি শেষে ৯টায় টিকাদান শুরু হয়েছে।
৭২ নম্বর ওয়ার্ডের টিকা কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবী সবুজ মিয়া জানান, মানুষ সকাল থেকেই এখানে লাইন ধরেছে। নারী-পুরুষ আলাদা লাইনে সুশৃঙ্খলভাবে টিকা দেওয়া হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে না। যারা কেন্দ্রে আসবে সবাই কে টিকা দেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে চলমান টিকা কর্মসূচির প্রথম ডোজ টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে।
তিনি জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ‘একদিনে এক কোটি’ করোনা টিকা ক্যাম্পেইনের মধ্য দিয়ে প্রথম ডোজ টিকাদান সম্পন্ন হবে। এরপরে দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজ প্রদানের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। যারা এখনও নেননি আজই নিকটস্থ কেন্দ্র থেকে ভ্যাক্সিন নিন, সুরক্ষিত থাকুন।
অন্যদিকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারির পরও প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ হবে না। তবে প্রথম ডোজের চেয়ে দ্বিতীয় ও বুস্টার (তৃতীয়) ডোজকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
দেশে করোনা টিকার নিবন্ধন শুরু হয় গত বছরের ২৭ জানুয়ারি। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮ বছর বয়সী যেকোনো মানুষ এখন টিকা নিতে পারছেন। দেশে এখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, মডার্না ও ফাইজার— এই চার ধরনের টিকা দেওয়া হচ্ছে।