গাজীপুর প্রতিনিধি: কালো টাকা নিয়ে খুব বেশি মাথা না ঘামানোর পরামর্শ দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আসন্ন গাসিক নির্বাচনের প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘কালো টাকা যতই বিতরণ করা হোক, যদি মনে করেন কনট্রোল করতে পারছেন না, কালো টাকা গ্রহণকারীদের বলে দিবেন ‘ভাই কালো টাকা নিলেও নিয়েন, ভোটটা কিন্তু স্বাধীনভাবে দিয়েন, যাকে বিশ্বাস করেন, যাকে ভালো মনে করেন ভোটটা তাকেই দিয়েন।’
বুধবার (১০ মে) গাজীপুর মহানগরের রাজবাড়ি রোডস্থ শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘কারণ ভোটটা দেয়ার সময় যিনি কালো টাকা দিয়েছেন তিনি তো পাশে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। আমি কাকে ভোট দিচ্ছি, কিভাবে দিচ্ছি তা তো দেখবেন না। কাজেই ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি আমার স্বচ্ছতা থাকে, স্বাধীনতা থাকে, সততা থাকে কালো টাকা জোর করে পকেটে কেউ ঢুকিয়ে দিলেও তাতে নির্বাচন প্রভাবিত হবে না। কারণ আমি তো টাকা চেয়ে নিইনি, কাজেই সেটা নির্বাচন প্রভাবিত করবে বলে আমার মনে হয় না।’
তিনি প্রার্থীদের উদ্দেশে আরো বলেন, ‘কালো টাকার বিরুদ্ধে প্রচারণাটা ব্যাপকভাবে করে যাবেন এবং মানুষকে সচেতন করবেন। কালো টাকার বিনিময়ে ভোট সত্যিকারের ভোটাধিকার নয়। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম দুর্নীতি আমরা বরদাশত করব না।’
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর, নির্বাচন কমিশনের সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো: সাবিরুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান প্রমুখ।
মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ মনোনিত অ্যডভোকেট আজমত উল্লা খান, জাতীয় পার্টি মনোনিত সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির রাজু আহাম্মেদ, স্বতন্ত্র জায়েদা খাতুন, শাহনুর ইসলাম সরকার রনি (রনি সরকার) ও হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
সিইসি আরো বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় কতোগুলো সমস্যা শাশ্বত, যেমন কালো টাকাসহ আরো কিছু সঙ্কটের কথা বলা হচ্ছে। এখানে কিন্তু আপনাদেরও (প্রার্থীদের) করণীয় কিছু আছে। আমরা পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্স দিব। কিন্তু আপনাদেরও আত্মরক্ষামূলক বা নিজের স্বার্থের জন্য করণীয় প্রদক্ষেপগুলো আপনাদেরকেই নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, মাঠে যখন খেলা হবে তখন দু’পক্ষকেই খেলতে হবে। আমি যতি কালো টাকা বিতরণ করে থাকি, আরেকজনকে এই কালো টাকা বিতরণ প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে যতটুকু সম্ভব। তাতে মাঠে থাকতে হবে আপনার, নির্বাচন কমিশন এসে পুলিশ এসে রাতারাতি সেটা করতে পারবে তা সম্ভব হবে না। তবে এই কালো টাকার সংস্কৃতি থেকে আমাদের ধীরে ধীরে উঠে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় এখনো অনেক অপসংস্কৃতি ও কালো সংস্কৃতি রয়ে গেছে। এখন আপনাদের যে স্টাইল, হয়তো একটা সময় আসবে যখন সকলে সুশৃঙ্খলভাবে অহিংসভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।’
সিইসি আরো বলেন, ‘আমাদের কমিশনের তরফ থেকে অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য যা কিছু করণীয়, যতটুকু আমাদের সামর্থের মধ্যে থাকবে ততটুকু করতে আমাদের আন্তরিকতার ও চেষ্টার কোনো অভাব থাকবে না। আমরা পুরোপুরি সেই চেষ্টাটা করব। কিন্তু আপনাদেরকেও স্ব স্ব অবস্থানে থেকে আপনাদের যে চেষ্টাটুকু সেটুকু পরিপূর্ণভাবে করবেন।’
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন করা আমাদের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব। তবে এটা ঠিক নির্বাচন কমিশন এককভাবে তেমন কিছু করতে পারে না। যদি আমাদের সহযোগী প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন তাদের দায়িত্ব শক্তভাবে এবং পেশাগতভাবে নিষ্ঠার সাথে পালন না করে থাকেন।’
সিইসি বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে শুধু আমরা নই, সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। নির্বাচন কিন্তু অর্থহীন নয়। নির্বাচনের যে গুরুত্ব রয়েছে সেটা আপনারা পত্র-পত্রিকা পড়লে বুঝতে পারবেন। আমরা যখন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করি, আমরা যখন দেখি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। আমরা কিন্তু তাদের মুখ চেপে ধরতে পারছি না। যদি সম্ভব হতো মুখ চেপে ধরতাম। কিন্তু মুখ চেপে তো ধরতে পারব না। পৃথিবীটা এখন উম্মুক্ত, এখন গ্লোবাল ওয়ার্ক। আমাদের নির্বাচন নিয়ে অ্যামিরিকা কথা বলছে, ইউকে কথা বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কথা বলছে, জাপান কথা বলছে এবং ইউনাইটেড ন্যাশনস কথা বলছে। কাজেই গাজীপুরে যে নির্বাচনটা হবে সেটার গুরুত্বটা আমাদের কাছে, নির্বাচন কমিশনের কাছে অধিক। কারণ আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, ওর আগে এতো বড় পরিসরের একটা নির্বাচন জাতীয়ভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। এ জন্যই গাজীপুর সিটি নির্বাচনটা একটা মডেল হোক, আপনাাদর সহযোগিতা, আপনাদের সদিচ্চার ওপর ভিত্তি করে এই নির্বাচনটা যাতে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে যে, আমরা সরকার বলেন নির্বাচন কমিশন বলেন আমরা যেন একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারি।