স্পোর্টস প্রতিবেদক: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আগে কখনোই জালের দেখা না পাওয়া কাই হাভার্টজ একেবারে মোক্ষম সময়ে বাজিমাত করলেন। দলকে উপহার দিলেন সবচেয়ে বড় জয়। ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে ইউরোপ সেরা আসনে বসল টমাস টুখেলের চেলসি।
পোর্তোর এস্তাদিও দো দ্রাগাওয়ে শনিবার অল ইংলিশ ফাইনালে দাপুটে ফুটবল খেলে ১-০ গোলে জিতেছে চেলসি। ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হল স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের দলটি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এ নিয়ে তৃতীয়বার ফাইনালে উঠে দুবার শিরোপা জিতল চেলসি। ২০০৭-০৮ আসরে প্রথমবার ফাইনালে উঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরেছিল তারা। চার বছর পর বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারেই হারিয়ে প্রথম ইউরোপ সেরার মুকুট পরেছিল দলটি।
কোচিং ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফাইনালে এসে প্রথমবারের মতো এই শিরোপায় চুমু আঁকলেন টুখেল। গতবার পিএসজিকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি; শিরোপা লড়াইয়ে বায়ার্নের বিপক্ষে হেরেছিল তার তখনকার দল।
অধিকাংশ সময় বল দখলে রাখা সিটির শুরুটা হতে পারত দারুণ। অষ্টম মিনিটে এদেরসনের লম্বা করে বাড়ানো বল প্রতিপক্ষের বক্সে খুঁজে পেয়েছিল রাহিম স্টার্লিংকে। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।
পরের সাত মিনিটে দারুণ তিনটি সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হন টিমো ভেরনার। হাভার্টজের ব্যাকপাস গোলমুখে ফাঁকায় পেয়ে বলে পা লাগাতে ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় সুযোগে গোলরক্ষক বরাবর শট নেন তিনি। আর তৃতীয়বারে এই জার্মানের জোরালো শট লাগে পাশের জালে।
২৭তম মিনিটে ফিল ফোডেনের শট স্লাইড ট্যাকলে আটকান আন্টোনিও রুডিগার। আট মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন হাভার্টজ, দারুণ ট্যাকলে বিপদ হতে দেননি অলেকসান্দার জিনচেঙ্কো।
একটু পর বড় একটা ধাক্কা খায় চেলসি। অস্বস্তি বোধ করায় মাঠ ছেড়ে যান অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার চিয়াগো সিলভা। এর একটু পরেই এগিয়ে যাওয়ার উল্লাসে ভাসে দলটি।
৪২তম মিনিটে গোলরক্ষক মঁদির বাড়ানো বল মাঝমাঠে পেয়ে সুযোগ বুঝে হাভার্টজের উদ্দেশে থ্রু পাস বাড়ান ম্যাসন মাউন্ট। কী বুঝে পোস্ট ছেড়ে বক্সের বাইরে বেরিয়ে যান এদেরসন, ওয়ান-অন-ওয়ানে দারুণ এক টোকায় তাকে ফাঁকি দিয়ে ফাঁকা জালে বল পাঠান হাভার্টজ।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২০তম ম্যাচে এসে প্রথম গোলের দেখা পেলেন তরুণ এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। ২০১৩ সালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ইলকাই গিনদোয়ানের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোপ সেরার আসরে নিজের প্রথম গোলটি করলেন ফাইনালে।
প্রথাগত কোনো স্ট্রাইকার না রেখে শুরুর একাদশে ‘ফলস নাইন’ হিসেবে কেভিন ডে ব্রুইনেকে খেলান গুয়ার্দিওলা। কিন্তু তা ফলপ্রসু হয়নি। প্রথমার্ধে নিষ্প্রভ এই বেলজিয়ান ৫৫তম মিনিটে রুডিগারের ফাউলে চোট পেয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে মাঠ ছাড়েন। তার জায়গায় নামেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার গাব্রিয়েল জেসুস।
৭৩তম মিনিটে ম্যাচ প্রায় শেষই করে দিতে পারতেন ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই ফরোয়ার্ডের চিপ দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে যায়। তিন মিনিট পর আক্রমণের ধার বাড়াতে স্টার্লিংকে তুলে ক্লাবের রেকর্ড গোলদাতা সের্হিও আগুয়েরোকে নামায় সিটি।
কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি তারা। সুযোগ অবশ্য এসেছিল। ৯০তম মিনিটেই যেমন হতে পারত গোল; কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকতে পারেননি ফোডেন। যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে মাহরেজের জোরালো শট ক্রসবারের একটু ওপর দিয়ে চলে গেলে স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় নুয়ে পড়ে সিটি। উৎসবে মেতে ওঠে চেলসি।
আজ থেকে পাঁচ মাস আগে কে ভেবেছিল, ইউরোপ সেরার মুকুট উঠবে চেলসির মাথায়। পিএসজি থেকে ছাঁটাই হয়ে গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে টুখেল যখন দায়িত্ব নেন, তখন চেলসি দিকহারা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আগের আট ম্যাচের পাঁচটিতে হেরে নেমে গিয়েছিল পয়েন্ট তালিকার ৯ নম্বরে।
এই কোচের ছোঁয়ায় আমূল বদলে যায় দলটি। তার কোচিংয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে প্রথম ১৪ ম্যাচেই অপরাজিত ছিল তারা। শেষ পর্যন্ত এবারের প্রিমিয়ার লিগ তারা শেষ করেছে চতুর্থ হয়ে। আর এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়! সত্যিই অবিশ্বাস্য!
ফেভারিটের তকমায় শুরু করা সিটির বিপক্ষে এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচ জিতল টুখেলের ভাষায় একটু একটু করে বেড়ে ওঠা চেলসি।